পেকুয়ায় নৌকা প্রতীকে নেই ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ। দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী অপছন্দ। এতে করে উজানটিয়া ইউনিয়নে নৌকা মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নেই দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নিয়ে মাঠে নেমেছে আ’লীগের তৃণমূল।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিয়ে অনিশ্চিত তৈরী হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক বরাদ্ধ পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এম, শহিদুল ইসলাম চৌং। তিনি দু’বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ শহিদুল ইসলাম চৌং ক্ষমতাসীন দল থেকে গেলবার বিজয়ী হন। তবে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর আ’লীগের নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে বেশী বঞ্চিত ও নিগৃহীত হন। সামাজিক ঝুঁকি হ্রাসকরণে সরকার থেকে প্রেরিত সকল সুযোগ সুবিধা থেকে দূরে রাখা হয় দলীয় কর্মীদের। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী সুফল ভোগী ছিলেন আ’লীগের বিপরীত অংশ।
দলীয় চেয়ারম্যান হলেও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ দলটির নেতা-কর্মীদের সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। অবমূল্যায়ন ও বঞ্চিতরা এবারের ইউপি নির্বাচনে শহীদ চেয়ারম্যানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্ধপ্রাপ্ত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এম, শহিদুল ইসলামকে নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে উজানটিয়ায় ইউনিয়ন আ’লীগে। দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মী নির্বাচনে তাকে বয়কট করেছে। এমনকি দলটির স্থানীয় ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি এম, তোফাজ্জল করিমকে প্রার্থী ঘোষনা করেছে তৃণমূল আ’লীগ। ওয়ার্ড কমিটিসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তোফাজ্জল করিমকে নিয়ে নেমেছে মাঠে। তারা মনোনয়ন ঘোষণার পর এম, শহিদুল ইসলাম চৌংকে উজানটিয়ায় অবাঞ্চিতও ঘোষনা করেন। দলীয় প্রার্থী থেকে তার নাম বাতিল চেয়ে শত শত নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নামে।
এ সময় উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রত্যেক প্রান্তে বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা সড়কে কলাগাছ রোপণ করেন। অভিনব কায়দায় তারা নৌকা মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচীও পালন করে। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে উজানটিয়ায় ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অন্ত:কোন্দল। অন্ত:দ্বন্ধ এক পর্যায়ে প্রকট আকার ধারণ করে। স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন মহল মন্তব্য করেছেন এ দ্বন্ধ আরও অধিক ঘনীভূত হবে।
২৮ নভেম্বর পেকুয়ায় ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হবে। নির্বাচনে এখনো প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্ধ পাননি। তবে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে পেকুয়ায় প্রচার প্রচারণা তুঙ্গে। প্রার্থীরা ছুটছেন প্রচার প্রচারনায়। ইউপি নির্বাচনে উজানটিয়ায় এবারে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন ৮ জন। তবে ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হেভিওয়েট হিসেবে দেখছেন ভোটাররা।
১ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি জামাল হোসেন ও সাধারন সম্পাদক মাহমাদুল হক বলেন, দলীয় প্রার্থী বিবেচনায় ভূল সিদ্ধান্ত এসেছে। ২ নং ওয়ার্ড সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, মানুষ পরির্তনের পক্ষে। আমরা তালিকায় নাম পাঠিয়েছিলাম তোফাজ্জল করিমকে ১ নম্বরে। কিন্তু এর প্রতিফলন হয়নি। দলীয় নেতা-কর্মী একজনও বর্তমান দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নেই।
সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম বলেন, এখানে তোফাজ্জলকে দলীয় প্রার্থী করা জরুরী ছিল। শহীদ চেয়ারম্যানের কাছে নেতা-কর্মীরা অবমূল্যায়ন হয়। যার ফলে এবার সবাই তার বিপক্ষে। ৩ নং ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি আবদুল গফুর বলেন, মানুষ জিম্মী থেকে উত্তরণ চান। এক জায়গায় বার বার ক্ষমতা যাচ্ছে। দেমাক অহংকারের কারণে নেতারা ওই প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, আমরা নিজেরাই তোফাজ্জলকে নিয়ে মাঠে নেমেছি। তাকে বিজয়ী করবো ইনআল্লাহ।
৫ নং ওয়ার্ডের সভাপতি এনামুল হক বলেন, তোফাজ্জল করিম এখানকার আ’লীগের রাজনীতির প্রাণস্পন্দন। আমরা তাকে পেয়েছি দু:সময়ে। সাধারন সম্পাদক আশেক ইলাহী বলেন নেতা-কর্মীরা শহীদ চেয়ারম্যানকে পছন্দ না করছেন। আমরা রাস্তায় নেমে তাকে দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ দেয়ার জন্য প্রতিবাদ করেছি। বহিষ্কার করলেও তোফাজ্জলকে নিয়ে মাঠে থাকবো। ওয়ার্ড কমিটির সকল নেতা-কর্মী আমরা এক ও অভিন্ন। যুবলীগ উজানটিয়ার সভাপতি মহিউদ্দিন জানান, তোফাজ্জল জনপ্রিয় প্রার্থী। হুমকি দিয়ে লাভ নেই। আপনিতো চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর নিয়েছেন কিনা। সাধারন সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। বাংলাদেশে অনেক ইউনিয়ন পরিষদে এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। আমরা চাই উজানটিয়াতেও সেটি হউক। কৃষকলীগ উজানটিয়ার সভাপতি জাকের আহমদ বলেন, এখানে তোফাজ্জলের বিকল্প নেই। বেশীদিন ক্ষমতায় থাকলে চোখ কান অন্ধ হয়ে যায়। ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক শাহ জামাল মেম্বার বলেন, আসলে নেতা-কর্মীরা বর্তমান চেয়ারম্যান শহীদের পক্ষে নেই।
৫ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবু তৈয়ব বলেন, মানুষ এবার খারাপ আচরণকারীর বিপক্ষে অবস্থান নিবে। দল ভূল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। জনগন একপক্ষে আর নৌকার প্রার্থী অন্যদিকে। ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, উজানটিয়া এখনো উন্নয়নের দিক থেকে অবহেলিত। মানুষ পরিবার কেন্দ্রিক ক্ষমতা থেকে বেরিয়ে আসতে চান।
ইউনিয়ন কমিটি বলেন, ওয়ার্ড কমিটি বলেন, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসহ সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ভোট দেব তোফাজ্জল ভাইকে। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এম, তোফাজ্জল করিম বলেন, শহীদ চেয়ারম্যান জনবিচ্ছিন্ন। তাকে মানুষ আর চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাননা। আমি প্রার্থী হতে চাইনি। কিন্তু আ’লীগের শত শত নেতা-কর্মীদের অনুরোধে আমি ভোট করছি। মানুষ আমার পক্ষে মাঠে নেমেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ গণসংযোগে যুক্ত হচ্ছে আমাকে জেতাতে। উজানটিয়াবাসীর অধিকার নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবনা। আমি বঙ্গবন্ধুর কর্মী। জীবনে ৪০ টি বছর আ’লীগের জন্য এ জনপদে সময় দিয়েছি। আপোষ করেনি। দু:সময়ে কর্মী হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীরা আমাকে নিয়ে ভাবছেন। তাদেরকে ফেলে যেতে পারেনি। আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আমি আ’লীগের তৃণমূলের প্রার্থী। উজানটিয়ায় এসে দেখে যেতে বলবো সবাইকে।