কক্সবাজারের পেকুয়ায় জেল ফেরত আসামী ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর ভয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন হাতের কব্জি হারানো সেই আ’লীগ নেতা আলী হোসেন। ২৬ মে (বৃহস্পতিবার) বিকেলে আ’লীগ নেতা আলী হোসেনের নিজ বাসভবন উপজেলার সদর ইউনিয়নের মইয়াদিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জখমী আলী হোসেন জানান, আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। গত দু’মাস ধরে আমি ও আমার সন্তানরা আতংকের মধ্যে আছি। যে কোন মুহুর্তে আমার উপর আবারো হামলা হতে পারে। আমি বাড়িতে অবরুদ্ধ রয়েছি। জেল ফেরত আসামী সন্ত্রাসী আলমগীর আমাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। বলছে আমাকে নাকি সে খুন করবে। মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। না হয় আমাকে মেরে ফেলবে। এমনকি শুধু আমি নয়, আমার ছেলে সন্তানদেরকেও খুন করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। লোকজনকে বলছে, আমার স্ত্রীকেও আলমগীর হত্যা করবে। আলমগীর একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও দাগী আসামী। সে দু’মাস আগে জেল থেকে বের হয়েছে। আলমগীরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছি। প্রথম মামলা হয়েছিল আলমগীরসহ সন্ত্রাসীরা আমার মেয়ে জন্নাতুন নাইমা মুন্নিকে অপহরণ করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১২ জুন আমার মেয়ে জন্নাতুন নাইমা মুন্নিকে দিন দুপুরে তারা অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। মুন্নি পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকুলীয় কলেজের এইচএসসির ১ম বর্ষের ছাত্রী ছিল। ওই ঘটনায় অপহরণকারী আলমগীরসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পেকুয়া থানায় মামলা করি। ওই মামলায় আসামীরা জেলে যায়। সন্ত্রাসী আলমগীর ওই মামলায় জামিনে মুক্ত হয়। মামলায় ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসী আলমগীরের নেতৃত্বে ১০/১৫ জনের অস্ত্রধারী দুবৃর্ত্তরা মইয়াদিয়া ষ্টেশনে আমাকে প্রাণনাশ চেষ্টা চালায়। ২০২০ সালের ২৮ আগষ্ট সকালে আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে মইয়াদিয়া ষ্টেশনে পৌছি। পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা সন্ত্রাসী জেল ফেরত আলমগীর ধারালো কিরিচ নিয়ে আমার উপর হামলা চালায়। কিরিচ নিয়ে কুপিয়ে আমার হাতের একটি কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা মূমুর্ষূ অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে। আমার সর্বশরীরে ডজনখানেক মারাত্মক জখম ছিল। ওই ঘটনায় আমার স্ত্রী বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় ঘটনার পর ২০২০ সালের ৩০ আগষ্ট মামলা রুজু করে। স্থানীয়রা ওই সন্ত্রাসীকে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে। তাকে পুলিশে সোপর্দ করে। ওই সময় থেকে সে জেল হাজতে ছিল। দু’মাস আগে জামিন নিয়ে বের হয়। মামলা প্রত্যাহার করতে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। এমনকি ওই মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আমাকে আবারো খুন খারাবীর মতো পরিস্থিতি ঘটাবে এমন হাকাবকা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এখন আমি বাড়ি থেকে বের হতে পারছিনা। সে দা দিয়ে আমার বাড়ির সামনে প্রকাশ্যে চলাফেরা করে। বলছে আমাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। আলী হোসেনের স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, আমরা খুবই শংকিত। আমার স্বামীকে অঙ্গহানি করা হয়েছে। হাতে কব্জি কেটে ফেলা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। আমার স্বামী আ’লীগ করেন। আমরা বের হতে পারছিনা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্থানীয় শাহ আলম বলেন, আলমগীর আমার মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছে আলী হোসেনকে মেরে ফেলবে এমন। জাকের আলম জানান, জেল থেকে এসে সে আরো হিং¯্র হয়ে গেছে। আলী হোসেনের ছেলে প্রবাসী জয়নাল জানান, আমরা ঘর থেকে বের হচ্ছিনা। আলমগীর কিরিচ নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। প্রবাসী ছেলে জুনাইদ জানান, এ সন্ত্রাসীর ভয়ে কেউ মুখ খোলছে না। আমার মাকেও হুমকি দিচ্ছে। পুত্রবধূ জন্নাতুল ফেরদৌস রুমি জানান, আলমগীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। আমরা ওই সন্ত্রাসী থেকে বাঁচতে চাই। পুত্রবধূ সুমাইয়া জন্নাত জানান, সম্ভ্রমহানির ভয়ে আর হত্যার ভয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী আলী হোসেনের মেয়ে জন্নাতুল বকেয়া তাসমি জানান, আমার আব্বা মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছে। তার একটি হাতের কব্জি চিরতরে হারিয়ে গেছে। এ সন্ত্রাসী কুপিয়েছে আমার বাবাকে।