• রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]
শিরোনাম
প্রেমের ফাঁদে ফেলে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই রুবির পেশা সিংড়ার আয়েশ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর সমাবেশ খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে : শেখ হাসিনা আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী-ছেলের লাশ উদ্ধার মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : ভারতপন্থী প্রার্থীর পরাজয় ঈদগাঁওতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে হুদা মেলা ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত ৪ বাক্কুম ব্রীজের ঢালাই ঝরে ফুঁটো; যানচলাচলে দূর্ঘটনার আংশকা! ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচ: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়

একটি জীবনদাত্রি খেজুর গাছ !

বিবিসি একাত্তর ডেস্ক / ২৫৩ Time View
আপডেট : বুধবার, ১ জুন, ২০২২

সাইফুল ইসলাম বাবুলঃ

আমি একটি খেজুর গাছ অমার কোনো ব্যক্তি নাম নেই । গেরোস্থের মুরব্বিরা ভিটা সাজাতে বাড়ীর সীমানায় আমাকে রোপন করে। মধ্যে মধ্যে আমরা ফলবীজ ছড়াছড়িতে বাড়ীর আঙ্গিনায় চলে আসি। কাটাযুক্ত বলে আমাকে কোন গবাদি পশু খায়না । তাই ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠলাম। তাল গাছের মতো যেনো “ উকি মারে আকাশে ” তবে পার্থক্য আছে । অমাকে কেটে খাজ তৈরি করা হয় রসের আশায় । তাই প্রতি শিতে আমি স্বরনীয়। ভাফা পিঠার সাথে আমার রস অনেককে মজা দেয়। মাঝে মধ্যে কিছু পাখি আমার ছুড়ায় বাসা বাঁধে।এ হচ্ছে আমার সাংবাৎসারকি জীবন রীতি।

প্রকৃতির বিরুপ ছোবলের সাথে আমি চিরো পরিচিত। কালবৈশাখী , ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো এ সব ভয়ংকর রূপসীদের সাথে আমি পরিচিতো। অমি একটু উচা বলে সবার সাথে আগে সাক্ষাৎ হয়। তাই আমি শক্ত শিকড এবং মজবুত শরীর নিয়ে তৈরি থাকি। জনপদ বিরান হলেও আমি এবং নারিকেল সহজে প্রস্থান করিনা । তবে রস সংগ্রহ ছাড়া মনুষ্যকূলে আমি প্রায় অবোহেলিতো। আমার তেমন যত্ন নেই, সামান্য পেলেও ছোট বেলায়। তবে আমার সান্তনা সারা জীবনে একটি রাতকে ধারণ করে আমি মনুষ্যহৃদয়ের অংশ। কুতুবদিয়ার উত্তর ধরুং আজিম উদ্দিন পাড়ায় আমার অবস্থান। ২৯ শে এপ্রিল ১৯৯১ সেই জীবনসংহাবি ঘূর্ণি ঝড় দুই লাখের উপর মানুষ মারা যায়। অগনিতো গবাদি পশু , বেসে যাওয়া ঘর বাড়ী এসব দেখলে ফেরদৌস ওয়াহিদের কথায় মনে পড়ে…
“ঘূর্ণি ঝড়ে জলোচ্ছ্বাসে মানুষ ভাসে , ভাসেরে ভাই ঘর বাড়ী বাংলাদেশে
হায়রে কতো ক্ষেতের ও পাঠ ধান, কাইড়া নিল ঐ যে নিটুর বান
গোয়ালেতে গরু নাই যে , মাঠে নাই ছাগল
প্রাণ ছাড়া সব হারালো , নাই কোনো সম্বল
একি গজব নাজিল হইলো জৈষ্ট্য মাসে, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে”।……..

এ সব অমি দেখেছি, তাদের সাথে মিতালী করে আমার অভিজ্ঞতা শরৎ চন্দ্রের সমুদ্র সাইক্লোনের গল্পের চাইতেও বেশী । শরৎ বাবু জাহাজে ছিলেন । আমি কিন্তু তাদের ভিতর ডুবে ছিলাম। মনুষ্যহৃদয় সদা সতর্ক নয়। ইলশে গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে আবহাওয়া বার্তা শুনা যাচ্ছে। বার বার যখন ঘূর্ণিবাবু মিলিয়ে যায় । সে রীতিতে মানুষ আর ঘূর্ণিবার্তা কর্নপাত করছেনা । আমার এলাকাতে গুটিকয়েক মুজিব কিল্লা, দু একটা পাকা ঘর আর তেমন কিছু নেই । থাকলেও মনেহয় আশ্রয়ে যাওয়ার ভাবনা ছিলোতাদের না । রাখাল বালকের সেই বাঘ সত্যিই সে দিন আসিলো । সময় কম , শিশু সন্তান সন্ততি , বৃদ্ধ মা বাবা নববধু থেকে সবাই বিপদ বেষ্টিত। বুক কি খালি হবে ? ছেড়ে যাবে কি নব বধু? বৃদ্ধ মা বাবাকে নিয়ে কি করি? ভাববার বা প্রশ্নোত্তের সময় নাই। এসে গেলো পাষান দরিয়ার পানি। সাথে ভ্রমান্ডকাপানো বাতাস, মহান পরীক্ষা কে কার সাথে যাবে ?

প্রকৃতিতে আওয়াজ , কোনো সময় নেই। নিয়ে যাবো এটাই ঠিক- তবে পরপারে না ইহপারে ? কোনো বিচার হবেনা । শুধু শোক স্মৃথি বয়ে বেড়াবে। অশ্রু আসলেও আসতে পারে । তবে স্মৃথিতে থাকবে। বিয়োগ ব্যাথা হৃদয় থাকবে ব্যাথাতুর। প্রকৃতির এক কিংভূত ষড়যন্ত্র , যার সাক্ষী আমি। একটু দেখিয়ে না দিলে কি হয়? অমি প্রবল বাতাসে দুলছিলাম মনে হচ্ছে এই বুঝি পড়ে গেলাম। পানির শ্রুতে হয়তো এক অনিদ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছে যাবো। কিন্তু নিচে দেখলাম আমার আশ্রয় দাতার বংশ ধরেরা আমার নিছে আমাকে অরোহন করতে ব্যস্ত। যখন চাচা আপন প্রান বাচা অবস্থা তখন আমি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নিদের্শন রেখে যাই। সুযোগ পেলাম ঝাপটা উপেক্ষা করে ধারণ করলাম। অমিতোএকবীজ পাত্রী উদ্ভিদ ডাল পালা ইেন। তাই কোন রকমে সেই সময়ের অষ্টম শ্রেনীর চাত্র বর্তমান দৈনিক হিমছড়ির সম্পাদক হাছানুর রশিদ সহ ছয জনকে ধারণ করলাম। তারা পরম মমতায় আমাকে ঝড়িয়ে ধরল । ক্ষেত্র বিশেষে পরনের কাপড় দিয়ে আমাকে তাদের সাথে বেধে ফেললো । ঢেউ আর বাতাস বাধ গুলো ছিড়ে ফেলল । আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করলাম মানুষের বাচার আকুতি। জল আমায় আকুন্ট নিমজ্জিত করলো। অমার আপন জনেরা আমাকে ধারন করে আছে। তারা বিবস্ত্র । অন্য দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাটির টানে চলে যাচ্ছে ধরণী , মনে হয় আমাদেরও নিয়ে যাবে।

পানি কমলো যাদের সাথে গতরাতে আমার গভীর আত্থিয়তা হলো তারা নেমে দেখলো তাদের চারিদিকে সীমাহীন রীক্ত হাহাকর কেউ নেই। কোথায় যাবে তারা , খাদ্য পানীয় কিছুই নেই। আবার হারালো স্নেহ,মায়া,মমতা,ভালবাসা।মানুষ বেঁবে থাকলে বদলায় তাই হয়তো তারা বদলাচ্ছে । কিন্তু অকৃত্রিম হারানো ভালবাসা কি ফিরে পাবে ? পাবে কি সাজানো গোছানো শৈশব স্মৃথি , নিজ গ্রাম । স্বাভাবিকতায় ফিরতে ফিরতে হয়ত মৃত্যু হবে । কিন্তু আমি দাড়িয়ে ভালোবাসবো, স্মৃথি হযে থাকবো , যেনো নিরব সাক্ষী , আমার আপনজনেরা এখনো আমাকে জড়িযে ছবি তোলে স্মৃথির কান্নায় ভেসে যায় । তাই আপনারা আমাদের সাথে মিতালী করুন । বাড়ী,রাস্তায় কিংবা খালি জায়গায় অমাদের মতো বন্ধুদের জায়গা দিন। এক দিন ভালোবাসুন আমরা চিরদিন ভালোবাসবো। বৃক্ষ রোপন করুন ,প্রকৃতির ভয়াল রূপকে মোকাবিলা করুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো ক্যাটাগরি