পেকুয়ায় ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে হত্যার মিশন ফাঁস করলো স্ত্রী। যৌতুক না পেয়ে মাদকসেবী ওই পলাতক আসামী স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে গলাটিপে স্বাসরুদ্ধ করে হত্যা চেষ্টা চালায়।
এ সময় ওই নারীর আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা ওই স্থানে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের উপস্থিতি টের পেয়ে যৌতুকলোভী মাতাল স্বামী ও পুলিশের খাতায় ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী সহযোগীদের নিয়ে সটকে পড়ে। এ সবের মধ্যেও ক্ষান্ত থাকেনি বর্বর ওই ব্যক্তি। শাশুড় বাড়িতে এসে ভাড়াটে লোকজনসহ কয়েক দফা হানা দেয়।
এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় তৈরী ধারালো অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে গভীর রাতে একাধিকবার হানা দিয়েছে। নিষ্টুরহত্যা ও জানমালের ভয়ে স্ত্রী এখন একমাত্র শিশুকন্যাকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। সর্বশেষ ২ জুন (বৃহস্পতিবার) স্বামী-স্ত্রীর বিরোধকে কেন্দ্র করে তুমুল হট্টগোল হয়েছে। মাস্তান ও ভাড়াটে বহিরাগত লোকজন নিয়ে ওয়ারেন্টভূক্ত ওই আসামী স্ত্রীর পিত্রালয়ে হানা দেয়। ওই সময়ে স্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা চালানো হয়। ওই নারীর চিৎকারে শতাধিক নারী-পুরুষ দ্রুত সেখানে ছুটে যান। এ সময় তারা ওয়ারেন্টভূক্ত মাদকসেবী ওই যুবকসহ তার অনুগত ভাড়াটে লোকজনকে ধাওয়া দেয়। এমন লোমহর্ষক ও নিষ্টুরতা নিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যার মিশন ফাঁস করলো এক পোশাক কর্মী ওই নারী।
উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে বাইন্যাঘোনায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সুত্র জানায়, গত দুই বছর পূর্বে মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যাঘোনা গ্রামের আবুল কাসেমের মেয়ে জিয়াসমিন আক্তার (২০) ও মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মারাক্কাঘোনার আমিনুল ইসলামের পুত্র জোবাইর উল্লাহর বিয়ে হয়েছে। জিয়াসমিন আক্তার চট্টগ্রাম শহরে একটি পোশাক শিল্পে চাকুরী করতো। অপরদিকে জোবাইর উল্লাহও চট্টগ্রাম শহরে থাকতো। ওই সুবাধে দুইজনের মধ্যে পরিচয় ও পরবর্তীতে মন দেয়া নেয়া হয়। তারা দুইজনেই গভীর সম্পর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে মন দেয়ার ওই সম্পর্ককে বাস্তবে রুপ দিতে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। ২০২০ সালের ২০ জুলাই ২৭১ নম্বর নিকাহ রেজিস্ট্রিমুলে ওই প্রেমিক জুটির বিয়ে হয়েছে। দেনমোহর ছিল ৬ লক্ষ টাকা। বকেয়া ৫ লক্ষ ও উসুল ১ লক্ষ টাকা।
এ দিকে বিয়ের পর ওই দম্পতি গ্রামে চলে আসে। বাইন্যাঘোনায় শাশুড় বাড়ীতে থাকে জোবাইর উল্লাহ। স্ত্রী আয় রোজগার করে। স্বামী ছিল বেকার। তবে তার গতিবিধি ছিল সন্দেহজনক। বিয়ের কয়েকমাসের মধ্যে চট্টগ্রাম শহরে থাকা অবস্থায় যৌতুক নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হয়েছে।
দাম্পত্যজীবন ওই দম্পতির জন্য বিষিয়ে উঠে। এ সময় জিয়াসমিনের স্বামী মাদক সেবন ও বিকিকিনিতে জড়ান। স্ত্রী এ সব বরদাশত করতে পারছিল না। এ নিয়ে তুমুল বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরে চট্টগ্রাম শহরের ভাড়া বাসায় স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তারকে গলাটিপে স্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে ওই দম্পতির সংসারে একটি কনে সন্তান জন্ম হয়।
স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তার জানান, সন্তান না নিতে চাপ প্রয়োগ করছিল। ভূমিষ্ট হওয়ার কয়েকমাস পর আমার নবজাতক সন্তানকে মাটিতে আছড় মেরে হত্যা চেষ্টা চালায়। আমাকেও চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় কয়েকদফা হত্যা প্রচেস্টা চালায়। আমি এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করি। যার সিআর নং ৪৮৫/২১। ওই মামলায় জোবাইর উল্লাহের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি আছে।
এ দিকে স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে জিয়াসমিন আক্তারকে হত্যার মিশনে নেমেছে। জিয়াসমিন আক্তার জানান, জোবাইর উল্লাহ একজন নষ্ট চরিত্রের মানুষ। সে বর্বর দাগী প্রকৃতির ব্যক্তি। আমি প্রতারিত হয়েছি। অসহায় পরিবারের সন্তান আমি। দরিদ্র বিমোচন করতে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করেছি। কিন্তু সেখানেই আমার কপাল পুড়লো। সহজ সরল বিশ্বাসে আমি তার প্রেমের ফাঁদে পড়েছি। আমি জেনেছি তার আরো একাধিক রমণী থাকতে পারে। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য বার বার চাপ প্রয়োগ করে। কয়েক দফা টাকা দিয়েছি। আমার মা ধার কর্জ করে তার দাবী পূরণ করেছে। সে একজন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। প্রায় সময় মাদক খেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকে। রাতে এসে মাতলামি করে। কিছু বললে ধারালো চুরি ও বটি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। দু’বার বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করতে চেয়েছিল। এরপর কয়েকদফা তার মাতাল সঙ্গীদের নিয়ে এখানে আমার মায়ের বাড়িতে এসেছিল। আমরা থাকি আশ্রয়ন প্রকল্পে। লোকজন জড়ো হয়ে ধাওয়া দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী বুলবুল আক্তার বলেন, জিয়াসমিনের স্বামী অসম্ভব নষ্ট প্রকৃতির ছেলে। মেয়েটি অসহায়। যে কোন মুহুর্তে সর্বনাশ ঘটাতে পারে। এ ভয়ে মেয়েটির মনে কাজ করছে। আমরাও মেয়েটির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ তার স্বামী খুবই হিংস্র। মা ফাতেমা বেগম জানান, এখানে এসে মাস্তানের মতো আচরণ করে। কয়েকদিন আগে এসে ৩০ হাজার টাকা, ১ টি বিদেশী মোবাইল ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে।
আমার মেয়েকে বাঁচাতে আমি সরকার, প্রশাসন, সাংবাদিক, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিবেকবান ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতা চাইব।