কক্সবাজারের পেকুয়ায় হামলায় মাদ্রাসা সুপারসহ একই পরিবারের ৬ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। জখমীদের মধ্যে মাদ্রাসা সুপারের স্ত্রী, ২ জন মাদ্রাসায় পড়–য়া ছাত্রীসহ ২ জন নারীও রয়েছে। আহতদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা গুরুতর বলে পারিবারিক ও হাসপাতাল সুত্র নিশ্চিত করেছেন। শনিবার (১৮ জুন) দুপুর ২ টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জালিয়াখালী নামক স্থানে হামলার এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন জালিয়াখালীর মৃত মৌলভী আবদুল হকের পুত্র ও জালিয়াখালী হেদায়তুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার, ওলামালীগের পেকুয়া উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মাওলানা হাসান রব্বানী (৩০), তার স্ত্রী কহিনুর আক্তার (২৬), বড় ভাই জিয়াউর রহমান (৪০) ও জিয়াউর রহমানের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৩২), পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার আলিম ১ম বর্ষের ছাত্রী ও জিয়াউর রহমানের মেয়ে তানজিনা সোলতানা (১৭), পেকুয়া হেদায়তুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী ও জিয়াউর রহমানের মেয়ে সাফিয়া আক্তার (১৪)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন দুপুরের দিকে মাদ্রাসা সুপার ও ক্ষমতাসীনদল আ’লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ওলামালীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মাওলানা হাসান রব্বানী নিজ কর্মস্থল হেদায়তুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় ২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্টান ছিল। অনুষ্টান শেষে তিনি বাড়ির দিকে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা একই এলাকার মৃত ছৈয়দুল হকের পুত্র নেজাম উদ্দিন, তার দুই পুত্র সজিব, শহিদুল ইসলামসহ ৪/৫ জনের দুবৃর্ত্তরা হাসান রব্বানীকে প্রাণনাশ চেষ্টা চালায়। মুহাম্মদ আবদুল্লাহর বাড়ির সামনে তাকে গতিরোধ করা হয়। এক পর্যায়ে দুবৃর্ত্তরা ওই শিক্ষককে কিরিচের কোপ দিয়ে ডান হাতে হাড়ভাঙ্গা জখম করে। তাকে উদ্ধার করতে ওই স্থানে পৌছেন তার স্ত্রী কহিনুর আক্তার, বড় ভাই জিয়াউর রহমান, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, মেয়ে তানজিনা সোলতানা, শাফিয়া আক্তার। এ সময় হামলাকারীরা এ ৫ জনকেও কুপিয়ে জখম করে। জখমীদের মধ্যে হাসান রব্বানীর বড় ভাই জিয়াউর রহমানকে পায়ে কুপানো হয়েছে। তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে মাথায় কুপিয়ে জখম করে। মাওলানা হাসান রব্বানীর স্ত্রী কহিনুর আাক্তারকে বামহাতে হাড়ভাঙ্গা জখম করা হয়। ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও জিয়াউর রহমানের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী জয়নাল আবেদীন জানান, এ ঘটনার ভিডিও ধারণ আছে। বাটন থেকে কিরিচ পড়ে গেছে। না হয় হাসান রব্বানী মারা যেতেন। ইমরান জানান, হাসান সাহেব বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পিছন দিক থেকে এসে অতর্কিত হামলা চালায়। গৃহবধূ রোকসানা আক্তার জানান, আমরা দ্রæত গিয়ে আহত ৬ জনকে ধরাধরি করে উদ্ধার করেছি। প্রতিবেশী মুজিবুর রহমান ও এরফানুল হক বলেন, এর আগে হাসান রব্বানীর বাড়ি থেকে মুঠোফোন চুরি হয়েছে। থানায় অভিযোগ ছিল। মানিক মেম্বার বিচার করিয়ে দিবেন মর্মে থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। সালিশি বৈঠকে মোবাইল চুরির বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এমনকি ওই বিষয়টি সেখানে নিস্পত্তি করা হয়েছিল। জখমী হাসান রব্বানী জানান, নেজামের ছেলে সজিব চুরি চামারি করে। বাড়ি থেকে মোবাইল চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল আমার। এর আগে আরও চুরি চামারির সাথে জড়িত আছে। আমার বসতভিটার লোহার নেট চুরি করেছে নেজাম উদ্দিনের ছেলে সজিব। তার বাবা নেজামকে ছেলের নেট চুরির বিষয়ে অবগত করি। ওই কথা বলার প্রেক্ষিতে নেজাম উদ্দিন ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে নেজাম উদ্দিন ও তার ছেলেসহ দা, কিরিচ নিয়ে এসে আমার উপর হামলা চালায়। তারা পূর্বের ঘটনা ও আজকে নেট চুরির দুই ঘটনা মিলে আজকের এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি। নেজাম ও তার ২ পুত্রসহ কাজল রুবি নামের এক নারীও দা, কিরিচ নিয়ে হামলায় জড়িত ছিল। আমার ডান হাতে হাড়ভাঙ্গা জখম হয়েছে। আমি একজন শিক্ষক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। পেকুয়া থানার ওসি ফরহাদ আলী জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। পেকুয়া থানার পুলিশ ফোর্স হাসপাতালে পাাঠানো হয়েছে। লিখিত এজাহার দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।