এস এম হানিফ
গতকাল সোমবার বিকেলে আমার ছোট চাচা মেম্বার শেখ ফরিদ ও আরেক চাচা আব্দুল মোনাফের পাঁচটি এবং জেঠাতো ভাই বেলালের দুটি ও আমির হোসেনের তিনটিসহ মোট ১০ টি গরু হারিয়ে যায়। প্রতিদিনকার মতো ঘরের পাশের বিলে এই গরুগুলো চরাতে দিয়েছিল। গরু হারানোর পর পুরো এলাকা জুড়ে যেন এক ধরণের শোকের মাতম চলছিল। সবাই পাগলপরা। যে যেদিকে পারছেন খবর নিচ্ছেন। একটি ট্রলির ড্রাইভার তো বলে দিয়েছেন ‘পিকআপে করে ৮-১০ টি গরু পেকুয়া চৌমুহনী থেকে পশ্চিমদিকে অর্থ্যাৎ মগনামার দিকে নিয়ে যেতে তিনি নিজ চোখে দেখেছেন।’
এরপর সবার চোখ মগনামা, উজানটিয়ার দিকে। খোঁজ নিলাম মগনামা ঘাট হয়ে কোনো গরু কুতুবদিয়া পার হইছে কিনা। ঘাটে টাকা তোলা ব্যক্তি নিশ্চিত করলেন সোমবার কোনো গরু কুতুবদিয়া পার হয়নি। তবে তিনি এও বললেন চুরি করে কেউ গরু নিয়ে গেলে ভোলার মুখ (শরৎঘোনা অংশ) ও উজানটিয়ার করিমদাদ মিয়ার ঘাট দিয়ে নিয়ে যায়। ওই দুই জায়গাতেও খবর লাগালাম, ফলাফল শূণ্য। আমার আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশি সবাই বিকেল থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেছেন। নিরাশ হয়ে ফিরলেন সবাই। একপ্রকার আশা ছেড়ে দিয়ে ঘুমালাম।
গরুগুলো হারিয়ে যাওয়াতে বেশি কষ্ট হচ্ছিল তাঁদের জন্য যাঁরা এতোদিন রাতদিন এক করে গরুগুলো লালন পালন করেছেন। অবস্থা এমন যে তাঁদের স্বান্তনা দেবার ভাষা কারও নেই। কারও কারও এই গরুগুলো শেষ সম্বল। গরুর মালিকদের অনেকে কেউ সারারাত ঘুমাননি, অঝোরে কেঁদেছেন।
আজ খুব ভোরে এক নারী বৈদ্যের কাছে গেলেন গরুর মালিক আমির হোসেনের স্ত্রী। সেই নারী বৈদ্য হাজিরা দেখে বলে দিলেন অমুখ দিকে যেতে যেতে গরুগুলো দেখবেন বা পাবেন। কি আশ্চর্য্য! গরুর মালিক বৈদ্যের দেখানো পথে যেতে যেতে একটা নয়, দুটো নয়, একে একে ১০ টি গরুই পেয়ে গেলেন! সেলুকাস! গরু মালিকদের ঘরে খুশির বন্যা চলছে যেন। আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন তাঁরা।
বৈদ্যালী বা বৈদ্য আমি বিশ্বাস করি না। অসুস্থতার সময় আমাকে অনেক বৈদ্য ও হুজুরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হুজুরের কাছে নিজ ইচ্ছেতে গেলেও বৈদ্যের কাছে আমাকে জোর করে ধরে বেঁধে নিতে হয়েছিল। বৈদ্যের কাছে যাওয়ার পর তাকে কিছু প্রশ্ন করতেই ক্ষেপে যেতেন। এর চিকিৎসা হবে না, সে এমন সে তেমন। আরও কত কী। একপ্রকার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে স্বান্তনা দিতে মূলত আমার বৈদ্যের কাছে যাওয়া। আমি জানতাম সেসব ভন্ডামি, টাকা মেরে দেবার ধান্ধা। তারপরও উপায় ছিল না। ওরা একপ্রকার আমার ঈমান-আমলও দুর্বল করে দিচ্ছিল। যাই হোক ভন্ডদের ভন্ডামিগুলো বাদ দিয়ে একদিন আমি ইন্ডিয়া গেলাম। চিকিৎসা নিলাম। মহান আল্লাহ আমাকে মোটামুটি সুস্থ করে ফেরত এনেছেন।
আজ গরুর সন্ধান দেয়া বৈদ্যকে কিভাবে বিশ্লেষন করবো বুঝতে পারছি না। বৈদ্যের বুইদ্ধালী (বুদ্ধি) কাজে লাগলো নাকি অলৌকিক কিছু। আপনারা এটিকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন? একটু ভেবে দেখেন তো।