কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি আকর্ষনীয় “নিভৃতে নিসর্গ” নামক প্রাকৃতিক স্বপ্নপূরী পার্ক। পার্কটি চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত। ২০২০ সালে এ পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দর্শনার্থীর ভিড় লেগে আছে।
মাতামুহুরী নদীর কিনারায় সবুজ বনাঞ্চল বেষ্টিত পার্কটি মনোমুগ্ধকর। দর্শকদের মন কেড়ে নেয়া প্রাকৃতি সৌন্দর্যে ভরপুর পার্কটির আয়তন ৯৩ একর। পার্বত্য লামা হয়ে ধয়ে আসা পার্কের পাশে ১৫৪ মিঃ গড় প্রস্থ বিশিষ্ট মাতামুহুরী নদীর নীলাভ জলতরঙ্গ আরো শোভা বর্ধন করেছে। এ নদীতে দর্শনার্থীর জন্য ইন্জিন চালিত বোট রয়েছে ২০ টি। এ সব বোটে করে পর্যটকরা ঘুরে বেড়ায় আর মুগ্ধ নয়নে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি।
চট্রগ্রাম- কক্সবাজার প্রধান সড়কস্থ জিদ্দা বাজার থেকে ৭ কিঃমিঃ পূর্ব দিকে “নিভৃতে নিসর্গ” নামক পার্কটিতে সহজেই যাওয়া যায়। চকরিয়া সদরের নিউমার্কেট ও আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্স এর সম্মুখ থেকে সিএনজি চালিত অটো বা মটর চালিত অটো রিকসা,টমটম যোগে ৮ কিঃমিঃ দূরত্ব অতিক্রম করে সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্তে নৈসর্গিক সবুজ শোভা মন্ডিত পার্কটি চোখে পড়বে। এ পার্কের পূর্বে সু-উচ্চ পাহাড়। পাহাড়ের ওপারে বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার ইয়ংছা অবস্থিত।
১৩ জুলাই (বুধবার) সকাল ১১ টায় পার্কটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অপার পর্যটন সম্ভাবনা পার্কটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। ছায়া সুনিবিড় পাখির কলকাকলিতে দৃষ্টি নন্দিত পাহাড়ে ঘেরা “নিভৃতে নিসর্গ” সত্যিই দেখার মত। মাতামুহুরী নদীর কোল ঘেষে নয়নাভিরাম সবুজ সু-উচ্চ পাহাড় আর মেঘের খেলায় মিশে গেছে সবুজ বনাঞ্চল। পার্কের প্রবেশদ্বারে গিয়ে দেখা হয় সোহান নামক এক ছেলের সাথে। হাতে তার রশিদ বই। কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম তাকে গাড়ি পার্কিং এর ভাড়া তোলার দায়িত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া পার্কের ভেতরে প্রবাহমান মাতামুহুরী নদীতে রয়েছে ২০ টি ইন্জিন চালিত বোট, ৫টি কায়ইং নামক নৌকা যেখানে চড়ে পর্যটকরা প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করে। সেখান থেকে আদায়কৃত ভাড়া থেকে দৈনিক ২৮০ টাকা তার আয়। তা নিয়েই চলে তার পরিবার। একাত্তর (৭১) পোস্টের এ প্রতিনিধি তার কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম পার্কটির খোঁজ খবর রাখেন। প্রশাসনের সহায়তায় পার্কের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালন করেন। উপজেলা প্রশাসন পার্কটিকে পর্যটন এলাকায় রুপান্তরিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিমের সাথে মুটোফোনে কথা হয়। তিনি জানালেন, অদূর ভবিষ্যতে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত “নিভৃতে নিসর্গ” প্রকৃতি প্রেমিদের এক আকর্ষনীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হবে। আমরা সরকারের কাছে এ পার্কটির জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বাজেট ঘোষনার দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে,পার্কের অভ্যন্তরে কয়েক জন ক্ষুধে ব্যবসায়ী রয়েছে। যারা সর্বদা পর্যটকদের রুচি সম্মত খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনে নিমগ্ন থাকে। এমন এক ব্যবসায়ী তপন দে জানালেন,সকাল টাইমে লোক সমাগম কম হলেও বিকেল টাইমে দর্শনার্থীর ভিড় বেশি থাকে। তাদের খাদ্য চাহিদার মধ্যে ঝাল জাতীয় খাবার পছন্দের প্রথমে থাকে। তাই ঝাল চটপটি,চনা-পেঁয়াজু,ঝালমুড়ি সর্বক্ষণ প্রস্তুত করে রাখতে হয়। স্থানীয় এ সব ব্যবসায়ীরাও সরকারের প্রতি দাবী করেন, এ পার্কটিতে যেন নান্দনিকতায় ভরপুর হয়।
এ দিন পার্কে ঘুরতে আসে DUCON নামক একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দল। ওই দলের ফ্লোর কাটিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কেমিক্যাল মেনুফেকচারার এর টেরিটরি সেলস ম্যানেজার মোঃ জিয়াউল হকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন দর্শনার্থী এ পার্কে আসে। পার্কে হোটেল মোটেল স্থাপন করলে অনেক ট্যুরিস্ট রাত যাপন করতে পারবে। এ ছাড়াও পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পর্যটন উপকরণ সংযুক্ত করে মনোরোম পরিবেশ সৃষ্টি ও হোটেল মোটেল, রেস্তোরা নির্মাণ করা হলে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।
দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিশ্বের সেরা পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা হাজার হাজার পর্যটক “নিভৃতে নিসর্গ” নামক পার্কেও একবার ঘুরে যাবে। এতে বদলে যাবে সুরাজপুর মানিকপুর এলাকা তথা চকরিয়ার পরিবেশ।