কক্সবাজারের পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ নেই স্লুইচগেইট মোকামে। এতে করে বেড়িবাঁধের বিলীন অংশের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। পাউবো বান্দরবান নিয়ন্ত্রিত ৬৪/২বি পোল্ডারের ৫২ নং স্লুইচগেইট পয়েন্টে প্রায় ১০ চেইন মত বেড়িবাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। উজানটিয়া চ্যানেলের পানির ধাক্কায় মধ্যম উজানটিয়ার হোয়াইক্ক্যা মার্কেট নামক স্থানে বেড়িবাঁধ বিলীন রয়েছে। ওই স্থানে পাউবোর নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। সেখানে পাউবোর ৫২ নম্বর স্লুইচ গেইটও রয়েছে। তবে ওই স্লুইচগেইটটি বর্তমানে অকেজো রয়েছে। বিকল স্লুইচগেইটের নিকটে বেড়িবাঁধটি সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে করে চলতি বর্ষা মৌসুমের যে কোন মুহুর্তে ওই অংশ দিয়ে সাগরের জোয়ারের লোনা পানি প্রবেশ করতে পারে লোকালয়ে। ২/১ দিনের মধ্যে সাগরে পানি বৃদ্ধি পাবে। আমাবস্যার ভরা তিথিতে সাগরের পানির মাত্রা বেড়ে যাবে। স্থানীয়রা জানান, জোঁর ভরা তিথিতে যে কোন মুহুর্তে বিলীন অংশের পানি ভিতরে প্রবেশ করে উজানটিয়াসহ মগনামা ইউনিয়নেও প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিকে বেড়িবাঁধের বিলীন অংশ দিয়ে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার শংকায় স্থানীয়রা ওই স্থানে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। মধ্যম উজানটিয়াসহ পূর্ব ও পশ্চিম উজানটিয়ার কয়েকটি গ্রামের মানুষ বেড়িবাঁধের ভয়ে আতংকিত রয়েছেন। তারা দ্রæত সময়ের মধ্যে বিলীন অংশে মাটি ভরাট কাজ বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। বুধবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও এর নিকটে বিকল হয়ে যাওয়া পাউবোর নিয়ন্ত্রিত ৫২ নং স্লুইচ গেইট পরিদর্শনের জন্য যাওয়া হয়। এ সময় ওই প্রান্তে বিপুল পরিমাণ লোকজন উপস্থিত থাকেন। সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে, পাউবো বান্দরবান নিয়ন্ত্রিত ৬৪/২বি পোল্ডারের ৫২ নং স্লুইচগেইটটির অবস্থান উজানটিয়া ইউনিয়নের মধ্যম উজানটিয়া পয়েন্টে। প্রবাহমান প্রেসিডেন্ট খালের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে ওই স্লুইচগেইটের উপর নির্ভরশীল। পূর্ব উজানটিয়ার মালেকপাড়া, মধ্যম উজানটিয়া ফকিরপাড়া, ভেলুয়ারপাড়া, জইন উদ্দিনপাড়া, পশ্চিম উজানটিয়ার জালিয়াপাড়া, ষাটদুনিয়াপাড়া, ফেরাসিঙ্গাপাড়াসহ আরো অধিক এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ওই স্লুইচগেইটটি অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এর তলদেশ ভরাট রয়েছে। পানি চলাচলের জায়গাটিও ভরাট রয়েছে। তলদেশে বিকল্প কিছু পাইপ সঞ্চালন রয়েছে। সে গুলিও এখন বিকল অবস্থায়। এর পার্শ্ববর্তী অন্তত ১০ চেইন মত বেড়িবাঁধের অর্ধাংশ প্রায় বিলীন। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য শরীয়ত উল্লাহ জানান, আমরা গত কয়েক দিন ধরে রাতে পাহারা দিচ্ছি। কেননা যে কোন মুহুর্তে জোয়ারের পানি ডুকতে পারে। ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন জানান, পানি ঠেকাতে আমরা ওই স্থানে বস্তাভর্তি কিছু মাটি দিয়েছি। প্রায় হাজার খানেক বস্তা সেখানে প্রতিরোধক হিসেবে দেয়া হয়েছে। সাবেক ইউপি সদস্য জিয়াবুল হক সিকদার বলেন, খুবই নাজুক অবস্থা। সাবেক ইউপি সদস্য আবদু রহিম জানান, ২০১৩ সালের দিকে বেড়িবাঁধের কারণে আমরা উজানটিয়া ও মগনামার মানুষ ৪ মাস পানিবন্দী ছিলাম। ওই পরিস্থিতির যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে প্রচেষ্টা থাকতে হবে। ইউপির চেয়ারম্যান এম, তোফাজ্জল করিম জানান, আমি গত তিন রাত সেখানে অবস্থান করেছি। মানুষ আমার এখানে এসে ওই বিষয়ে আমার সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে অন্তত ২/১ দিনের মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে কাজ আরম্ভ করতে হবে। না হলে পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। আমার উজানটিয়াবাসী বেড়িবাঁধ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তারা জানমাল ও সম্পদ রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধের বিলীন অংশে মাটি ভরাট ও অকেজো স্লুইচগেইটটি সচল রাখার পক্ষে একাট্টা রয়েছে। ইতিমধ্যে আমি ৪ লক্ষ টাকার মত ব্যয় করেছি। জায়গাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ন। নদী পয়েন্টে চর নেই। গভীরতার কারণে সেটি সেখানে ঝুঁকির মাত্রা বেশী। পাউবো বান্দরবানের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম জানান, আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। জরুরীভাবে বরাদ্ধ দেয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়ে আমরা প্রস্তাবনা চুড়ান্ত করবো। পাউবো বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুপ চক্রবর্তী জানান, অফিসিয়াল সিস্টেম রয়েছে। সেগুলি মেনে আমাদেরকে এগুতে হচ্ছে। উর্ধতন মহলকে এখানকার বিষয়ে অবগত করেছি। পাউবোর চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী সিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, পাউবো থেকে একটি টীম উজানটিয়ার ওই স্থানে গিয়েছিলেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে এর প্রস্তাবনা চুড়ান্তকরণের জন্য ইতিমধ্যে কথা বলেছি। অফিসিয়াল সিস্টেমের মধ্যে থাকতে হয় আমাদেরকে।