লামা পৌর শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন পৌর মেয়র। ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি আমান উল্লাহর সভাপতিত্বে ২৪ জুলাই (রবিবার) সন্ধা ৭ টায় জেলা পরিষদ গেষ্ট হাউজে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম লামা বাজারকে “ক্লিন টাউন” ঘোষণা দেন।
এসময় তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে বলেন, সুন্দর ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে আমরা লামা শহরবাসী পিছিয়ে আছি। অর্থনীতি ও কর্মচাঞ্চল্যতায় এগুতে হলে শহরকে পর্যটন উপযোগী করে তোলতে হবে। পর্যটক অনুকুল শহর তৈরি করতে হলে, পরিস্কার পরিচ্ছনতার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, শহরের হোটেল রেঁস্তোরাগুলো সুন্দর রাখতে হবে। লামা পৌর শহর ক্লিন টাউন ঘোষণা করে তিনি আরো বলেন, আমাদের ছোট্ট শহরটি যে কোন মূল্যে পরিস্কার ও যানজটমুক্ত রাখবো।
এসময় তিনি বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে বলেন, বিশ্বের উন্নত শহরে একটি টিস্যু পর্যন্ত যত্রতত্র ফেলেন না। যানবাহনগুলো শৃঙ্খলা সহকারে শহর অভ্যন্তরে ধীরগতিতে প্রবেশ করে। কেউ কাউকে ওভার টেক করে না। তারা ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করেন। তিনি বলেন, শহর অভ্যন্তরে রাস্তার পাশে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কসপগুলোকে সড়কমুক্ত রাখতে হবে। বাসাবাড়ির ময়লা ফেলে ড্রেন ভরে ফেলার অভ্যাস পরিহার করার অনুরোধ জানান মেয়র।
ট্রাফিক বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, শহরের জনবহুল পয়েন্টগুলোতে রিক্সা, টমটম দাঁড়াতে দেয়া যাবেনা। তিনি আরো বলেন, এর পর থেকে বেআইনীভাবে ময়লা ফেলা হলে, আইনানুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এব্যপারে ট্রাফিক বিভাগেরও সহযোগিতা কামনা করেন।
মাছ বাজারের পূর্বদিকে ময়লা আবর্জনামুক্ত রাখার অনুরোধ জানান। কাপড় মার্কেটের উপর পলিথিন লাগিয়ে বস্তি সাদৃশ্য রুপ পরিহারের কথা বলেন। বিভিন্ন গলিতে ব্যবসায়ীরা বিপনন সাজিয়ে নারাখার জন্য বলা হয়। দোকানের সম্মূখ অংশ ভাড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা রোধেও আহবান জানান। ব্যবসায়ীরা যেন ফুটপাত দখলমুক্ত রেখে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উম্মূক্ত রাখতে বলা হয়। প্রায় ১ ঘন্টার বক্তব্যে মেয়র নাগরিক জীবনের মানসম্মত অনেক স্বপ্নের কথা উল্লখ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংবাদিক মিজানুর রহমানের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে লামা পৌর শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা আরম্ভ হয়েছে। এরপর ত্রিপিটক ও গীতা পাঠ শেষে স্বাগত বক্তব্য দেন ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা পলিথিন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলছেন, যারফলে ড্রেন বন্ধ হয়ে আবর্জনায় ভরে যায় শহর। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশাজীবী অনেকে বক্তব্য দেন। এদের মধ্যে, লামা পৌর নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, সমস্যা নিয়ে দীর্ঘালোচনার চেয়ে সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। পৌরসভার জনবল সংকট রয়েছে, এরপরও পৌর কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছে।ব্যবসায়ীরা যার যার সামনে পরিস্কার রাখলে, শহর এমনিতেই সুন্দর থাকবে। শুধু পরিচ্ছন্ন কর্মির দিকে চেয়ে থাকলে চলবেনা।
আওয়ামীলীগ এর সাগঠনিক সম্পাদক, পার্বত্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রদীপ কান্তি দাশ বলেন, যিনি কাজ বেশি করেন, তার দুর্ণামও বেশি। মেয়র তাঁর দায়িত্ব পালনে দিনরাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পৌরসভাকে ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করতে তিনি আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শহর সুন্দর ও নিরাপদ রাখতে তিনি গভীর রাত পযর্ন্ত শহরে সময় দেন।
ইতিমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, প্রতিষ্ঠানের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেন। চৌরাস্তার মোড় থেকে পূর্বদিকে লামামুখ সড়ক সম্প্রসারণ করার জন্য মন্ত্রী মহোদয় ইতিমধ্যে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। বাজার ব্যবস্থাপনা জেলা পরিষদের, তাই বাজারের গলি দখল করে ভবন নির্মান বা অপসারণে মেয়র নিরুপায়। তারপরও সমন্বিত উদ্যোগে শহর বা বাজার সুন্দর করতে হবে। এই তরুণ নেতা আরো বলেন, আমাদের শহরটি পর্যটক অনুকুল নয়। পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে পর্যটক আসে। কারণ সেখানে হোটেলগুলোর পরিবেশ উন্নত।
ট্রাফিক ইনস্পেক্টর সৈকত দে বলেন, শহরের রাস্তা সংকীর্ণ, এটা একটা বড় সমস্যা। শহরে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য জটলা সৃষ্টি লক্ষণীয়। ধীরগতির যানগুলোর জন্য স্টেশন করলে হয়তো জট কমতে পারে। তিনি বলেন, যে কোনো বাজারে জট সৃষ্টি হওয়া একটি আদিম ঐতিহ্য। সুতরাং পূর্ণাঙ্গ যানজটমুক্ত করা না গেলেও কমানো যায়।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, ধীরে ধীরে শহর বা বাজারের অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যােগ নিতে হবে। আমরা যদি প্রত্যেকে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলি, তবেইতো শহর সুন্দর থাকবে। একজনের আইন দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। সুতরাং সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। যানজট নিরসনে শহরে প্রবেশের বিকল্প সড়ক নির্মাণ করার পরামর্শও দেন তিনি। ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, মেয়রের যতেষ্ট ক্ষমতা আছ, কিন্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি আন্তরিক হওয়ায় ক্ষমতার প্রয়োগ করেন না। ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, শহরে নির্মিত ভবনগুলো আগে থেকে গলি দখল করে আছে। স্থানীয় কৃষিপণ্য বিপণনে নিরাপদ ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসক জাহাঙ্গীর বলেন, ডাস্টবিন দিতে হবে। মেয়র সাহেব হয়তো উদারতা দেখিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। যদি সেটা করা হত, হয়তো পরিবেশ অনেক সুন্দর হতে পারতো।
সাংবাদিক তানফিজ বলেন, মধ্যরাতে শহরে কোনো ফার্মেসী খোলা থাকেনা। বাই রুটেশন প্রতি রাত্রে অন্ততঃ একটি ফার্মেসী খোলা রাখা দরকার। লামা বাজার ইজারা দিয়ে যারা টাকা নেয়, তারা বাজার পরিস্কার রাখেন কিনা(?)। তাদেরকেও জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিপুল নাথ বলেন, আমরা ব্যবসায়ী আমাদের ত্রুটি থাকতে পারে। ড্রেন বা ফুটপাতমুক্ত রাখা দরকার। পরিচ্ছন্ন কর্মিরা কাজে অবহেলা করে। বাজার পরিস্কার রাখতে আমরা সর্বাত্বক সহযোগিতা করবো। বাজারে চোর কমেছে। লাইটিং উন্নত হয়েছে। সাংবাদিক কামালুদ্দিন বলেন, মেয়র সাহেব বারবার তাগাদা দিলেও কোনো কিছু কার্যকর হচ্ছে না। সুতরাং পৌরমেয়র ও পৌরসভার সকল কর্মকর্তাসহ কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। রিপোর্টার ক্লাব সভাপতি রফিক বলেন, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নেই, এর জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা দায়ী। যানজটমুক্ত করতে কঠিন হতে হবে। লামা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমরা সকলে মিলেমিশে কাজ করলেই পৌর এলাকা পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখা যাবে। সাংবাদিক ফোরাম সম্পাদক উজ্জ্বল বড়ুয়া বলেন, টমটম, মোটর সাইকেল, অটোরিক্সা বেপরোয়া চলে এবং শহরে যানজট সৃষ্টি করে।সিএনজি-মাহিন্দ্রা সমিতির সম্পাদক ফারুক বলেন, সিএনজি মাহিন্দ্রা বাজারে যানজট তৈরি করে না। স্টেশন না থাকায় যানজট হচ্ছে। টমটম মালিক সমিতির সম্পাদক বেলাল বলেন, একা শহর সুন্দর বা যানজটমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। সমন্বিত উদ্দ্যোগ না নিলে যানজটমুক্ত রাখা যেতে পারে না। টমটম রাখার জায়গা অন্যরা দখলে নিয়ে নেয়। ফুটপাত মুক্ত রাখা দরকার। অটোরিক্সা চালক সংগঠনের নেতা ইউছুপ বলেন, যানজট মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে পারবো; এই ক্ষেত্রে যাত্রীদের চাহিদার বিষয়টা গুরুত্বপুর্ন। গলি দখল করে রাখার কারণে মূলতঃ দুইটা রিক্সা একসাথে চলতে পারে না। মাছ ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক চিত্ত বাবু বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে পরিস্কার রাখা সম্ভব।