ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে বাচোর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে মায়ের কোলে থাকা ৮ মাসের শিশু সুরাইয়া আক্তার আশা। ঘটনার ছয়দিনেও হয়নি কোনো হত্যা মামলা, নেই কোনো আটক।
গত বুধবার বিকেলে বাচোর ইউনিয়নের ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেয়ে সুরাইয়াকে কোলে নিয়ে তার মা মিনারা আক্তার ভোট দিতে যান। মিনারার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘ভোট দিয়ে ফেরার পথে ভোট কেন্দ্রের পাশ্ববর্তী একটি বাড়ির দরজার পাশে তিনি তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা হলে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকদের সঙ্গে কথাকাটাকাটির মাঝে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে।
এই সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে মারা যায় মায়ের কোলে থাকা ৮ মাসের শিশু সুরাইয়া। এসময় মাথার খুলি উড়ে যায় তার। চারদিকে শিশুটির ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া মগজ ও রক্তাক্ত দেহ দেখে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী।
ওই রাতেই সুমায়ার মরদেহ নিয়ে রাস্তা অবরোধ, থানা ঘেরাওসহ পুলিশের একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধ জনতা ও এলাকাবাসী।
ঘটনার চার দিন পরে প্রায় ৮০০ জনের অধিক আসামী করে পুলিশ মামলা করেছেন তিনটি। যার মধ্যে নির্বাচনী সহিসংতার অপরাধে ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা করেছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান। থানা ঘেরাও এবং অবৈধ আটক রাখার অপরাধে পুলিশের এ এস আই আহাদুজ্জামান ও বিলাস বাদী হয়ে মোট ৪৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামী করে রাণীশংকৈল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
এইদিকে নিহত শিশুর ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার মীরডাঙ্গী গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তবে ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও শিশু হত্যার মামলা এখনো হয়নি। তবে পুলিশের মামলা তিনটি শনিবার সন্ধায় হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রানীশংকৈল থানার ওসি।
সহিংসতা,থানা ঘেরাও ও নির্বাচনী মামলা হওয়ার পর গ্রেফতার আতংকে ঘর ছাড়া হয়ে পড়েছে ওই এলাকার পুরুষেরা। তারা দিনের বেলা বাড়ীতে থাকলেও রাতে কোনভাবে বাড়ীতে থাকছেন না বলে জানা যায়। এতে নিরাপত্তাহীনতা ও চরম ভোগান্তি রয়েছে ওই এলাকার পরিবার পরিজনের মানুষেরা। অপরদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট রামকৃষ্ণ বর্ম্মনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা আজ সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়াও নিহত শিশুর পরিবার, প্রিজাইডিং অফিসার সহ স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
এসময় তদন্ত কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, আমরা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব এই বিষয়ে জেলাপ্রশাসকের নিকট তদন্ত রিপোর্ট জমা করা হবে।