কক্সবাজারের পেকুয়ায় বনের ৭ একর জমি নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জমির ভোগ দখলে নিতে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। বনবিভাগের নিযুক্ত ভিলেজারের ওয়ারিশদের জমি থেকে হটাতে ফক্সি চুক্তিনামার ছড়াছড়ি চলছে। ৭ একর জমির নিয়ন্ত্রন ও আধিপত্য নিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ের মিশনে নেমেছে। ওই জমির দখল ও বেদখলকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ মুখোমুখি হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তি করতে স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। তবে বৈঠকে টাকার ছড়াছড়িতে স্থানীয় বৈঠকটি পন্ড হয়ে যায়। খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ ওই স্থান পরিদর্শন করেছেন। উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বটতলী জুমপাড়ায় জমি নিয়ে এ কান্ড দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ৭ একর জমি নিয়ে টইটং ইউনিয়নের বটতলী জুমপাড়ায় বিরোধ দেখা দিয়েছে। ওই জায়গা বনবিভাগের মালিকানাধীন সম্পত্তি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের অধীন ও পুঁইছড়ি বনবিটের নিয়ন্ত্রণাধীন ৭ একর জমি রক্ষনাবেক্ষণ করছিলেন আমির হামজা নামক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন বনবিভাগের ভিলেজার। বিগত ৫০/৬০ বছর আগে বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ৭ একর জমি আমির হামজা রক্ষনাবেক্ষণ করছিলেন। তিনি মারা যান। তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে ওয়ারিশ ছিল। ওই সম্পত্তি তার ২ ছেলে নুরুল ইসলাম ও তৈয়ম গোলাল পরবর্তীতে ভোগ করছিলেন। ৩০ বছর আগে আমির হামজার ২ পুত্র পরিবার নিয়ে অন্য স্থানে চলে যান। ওই সময় নাল জমি ৩ একর ৬০ শতকের জন্য অস্থায়ী চাষা দেওয়া হয়। ২ একর ৪০ শতক ছিল বসতভিটা। বসতভিটার জায়গা এদের নিকটাত্মীয় মৃত আমিরুজ্জামানের পুত্র বদিউল আলম, মৃত বাচা মিয়ার ২ পুত্র ইয়াকুব নবী ও আইয়ুব নবীসহ ৩ জনকে দেখভালর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ফসলি জমি চাষাবাদের জন্য সেই সময় বাঁশখালী পুইছড়ির ৬ নং ওয়ার্ডের ছলনি বাজারের বাসিন্দা আবুল হাসেম প্রকাশ হাসেম ডিলারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই ব্যক্তি তৈয়ম গোলাল ও নুরুল ইসলামের ওয়ারিশদের সন সন খাজনা দিয়ে জমি চাষ করতেন। স্থানীয়রা জানান, বিগত কয়েক বছর আগে জমির মূল চাষা আবুল হাসেম মারা যান। তার ছেলে জাহাঙ্গীর গং তৈয়ম গোলাল গংদের জমি চাষাবাদ করছিলেন। ৫/৬ বছর আগে থেকে ফসলি জমির ওয়াসিলা দেয়া থেকে বিরত থাকেন জাহাঙ্গীর গং। এতে করে তৈয়ম গোলাল গংদের ওয়ারিশ ও চাষা আবুল হাসেমের পুত্র জাহাঙ্গীর গংদের মধ্যে বিরোধের সুত্রপাত হয়। অপরদিকে বদিউল আলম গংদের হেফাজতে থাকা ২ একর ৪০ শতকের বেশী ঘরভিটার জায়গা নিয়েও ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়। আমির হামজাকে তৈয়ম গোলালের বাপ বলে সবাই চিনতেন। জুমপাড়ায় তৈয়ম গোলাল বাপের ভিটা রয়েছে সেই হিসেবে সবাই চিনতেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে পৈত্রিক ভিটা নিয়েও তৈয়ম গোলালের পুত্র জাবের গং ও মৃত বাচা মিয়ার পুত্র আইয়ুব নবী গংদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে তৈয়ম গোলালের পুত্র জাবের আহমদ গং পৈত্রিক সম্পত্তিতে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টার প্রচেষ্টা করছিলেন। তারা ফসলি জমিতে আমন ফসল রোপণের কাজ করছিলেন। এতে করে আবুল হাসেমের পুত্র জাহাঙ্গীর ও তৈয়ম গোলালের পুত্র জাবের আহমদ গংদের মধ্যে জমির বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করে। টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাহাঙ্গীর আলম গং জমির দখল না ছাড়তে প্রাণপণ চেষ্টায় করছেন। এ ব্যাপারে তৈয়ম গোলালের পুত্র জাবের আহমদ জানান, আমরা আলীকদমে থাকি। আমার বাপ চাচারা এলাকা থেকে চলে যাওয়ার সময় আবুল হাসেম ডিলারকে অস্থায়ী চাষা দিয়ে গেছেন। তারা ২০/২৫ বছর ওয়াসিলা দিয়েছে। এখন ফক্সি চুক্তিনামা তৈরী করে জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। আমার বাবা তৈয়ম গোলাল ও চাচা নুরুল ইসলাম কাউকে স্ট্যাম্প দেননি। তবে তারা একটি জাল ষ্ট্যাম্প প্রদর্শন করছে। এখানে যারা স্বাক্ষী ছিলেন সবাই মারা গেছেন। সাহাব মিয়া নামক স্ট্যাম্পের একজন স্বাক্ষী আছে। তার স্বাক্ষরও জাল। স্ট্যাম্পের স্বাক্ষী মৃত সাহাব মিয়ার ছেলে টইটং ইউপির সাবেক মেম্বার আবুল কাসেম বলেন, বিচারে আমি গিয়েছিলাম। আমি বলেছি, আমার বাবা স্বাক্ষী থাকাটা মিথ্যা। কারণ স্ট্যাম্পে বাবার স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু আমার বাবা স্বাক্ষর জানতেন না। তিনি দিতেন টিপ সহি। ইউপি সদস্য আবদুল জলিল জানান, তৈয়ম গোলালের জমি আছে। কিন্তু তার ছেলে মেয়েরাতো অসহায়। এখনতো বিচার দুর্বলদের পক্ষে থাকেনা। তৈয়ম গোলালের পুত্র জাবের আহমদ জানান, জুমপাড়ায় এখনো আমার দাদার খামার ভিটা রয়েছে। আমরা বিচার দেয়ার পর ওই ভিটায় রাতারাতি একটি কুড়েঁঘর তৈরী করা হয়েছে। ৯ কানি জমি আমার বাপ দাদার ভোগ দখলীয় জমি। এখন তারা নকল কাগজ তৈরী করেছে। দস্তখত ফক্সি। স্ট্যাম্পও ফক্সি। স্থানীয় আবদু শুক্কুর সওদাগর জানান, তৈয়ম গোলাল ও নুরুল ইসলামের দুই ভাইয়ের প্রচুর জায়গা জমি রয়েছে। এ গুলো এদের ওয়ারিশদের সম্পত্তি। ভিলেজার ছালেহ আহমদ কম্পান্ডারের নাতি জয়নাল জানান, আমার দাদাও ভিলেজার ছিলেন। আমির হামজাও ভিলেজার। এ সম্পত্তি তাদের। হেডম্যান নুরু জানান, এখানে আমির হামজার ভোগ দখলীয় জায়গা জমি ছিল। তৈয়ম গোলালের স্ত্রী শামসুন্নাহার জানান, আমরা অসহায়। আমার ছেলে মেয়েদের হক ফিরে পেতে চাই। নুরুল ইসলামের পুত্র নুরুল আমিন জানান, আমরা হারবাংয়ে থাকি। এ জায়গা আমার দাদার সম্পত্তি। তৈয়ম গোলালের পুত্র বশির আহমদ জানান, এখানে বদর বর ভিটা রয়েছে। আমি হচ্ছি বশির আহমদ বদ। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ চট্টগ্রামের পুইছড়ি বনবিট কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম জানান, আসলে সম্পত্তি বনবিভাগের। এখানে কেউ যদি বনবিভাগের সম্পত্তি নিয়ে সংঘাতে জড়ান তাহলে ওই জায়গাটি আমরাই নিয়ন্ত্রন নেব। পুইছড়ি বনবিট থেকে ২৯৭ টি পরিবারকে উচ্ছেদ নোটিশ দেয়া হয়েছে। ৩১ টি ভিলেজার পরিবারও রয়েছে। আসলে ভিলেজার প্রথাটি অনেক আগেকার। সেটিতো আমি দিই নাই।