কক্সবাজারের পেকুয়ায় কাল্পনিক ঘটনায় মামলা হয়েছে। চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ওই মামলাটি রুজু করা হয়। যার সিপি নং ১১৫৪ /২২। অধিকতর তদন্তের জন্য ওসি পেকুয়াকে এর তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে ৮ জনকে। আসামীদের মধ্যে ১ জন শিক্ষক, ২ জন ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের ওয়ার্ড কমিটির নেতাসহ কৃষক ও দিনমজুরকেও আসামী করা হয়েছে। অনেক দিন ধরে এলাকার বাহিরে আছেন। প্রতিষ্টানে শিক্ষকতা করেন এ রকম ব্যক্তিও ওই মামলায় আসামী। মামলার বাদী যুবদল নেতা। জায়গা জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয়ভাবে বৈঠকও হয়েছে। জমির দালিলিক বিষয়ে জজ আদালতে অপর মামলা আছে। রেকর্ড সংশোধনী মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালতে বিবাদীপক্ষের সোলেহনামা বিচারিক আদেশে গণ্য করা হয়েছে। তথ্য গোপন করে জমিতে নামজারী খতিয়ান সৃজিত হয়েছে। সৃজিত বিএস খতিয়ানের বিরুদ্ধে রিভিউ মামলা বিচারাধীন। সম্প্রতি জমির বিরোধ অধিক তীব্রতর হয়েছে। মামলার বাদী যুবদল নেতা নুরুল মিজবাহ ভাড়াটে লোকজনসহ রাতে জমি দখল চেষ্টা চালায়। এ সময় ভোগ দখলীয় পক্ষ জবর দখল ঠেকান। এর সুত্র ধরে যুবদল নেতা নুরুল মিজবাহ বাদী হয়ে চলতি বছরের ৪ আগস্ট চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি কোর্ট পিটিশন রুজু করেন। আর্জিতে বাদীর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে বিবাদীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনেন। প্রাপ্ত সুত্র জানান, ১০ শতক জমি নিয়ে বারবাকিয়া ইউনিয়নের বারাইয়াকাটায় মৃত আবুল কাসেমের পুত্র যুবদল নেতা নুরুল মিজবাহ ও মৃত ফকির মোহাম্মদের পুত্র আবুল হোসাইন গংদের মধ্যে। ১৯৪৪ সনের দিকে আবুল হোসাইনের পিতা ফকির মোহাম্মদ ৪ একর ৩০ শতক জমি খরিদ করেন। যার দলিল নং ২৬৯। আরএস ৯২৭ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক পিয়াজ জান ওই জমির দলিল দাতা। এম,আর ১০৬৭ খতিয়ানে দলিল গ্রহীতা ফকির মোহাম্মদের নামে রেকর্ড প্রচার আছে। আর,এস সামিলে রেকর্ডে ভূমি নথিতে দলিল গ্রহীতা ফকির মোহাম্মদের নামে রেকর্ড জারী আছে। তবে বিএস রেকর্ডে ফকির মোহাম্মদ ছাড়াও তার অপর ৩ ভাই ওয়াজ উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবদুল হাকিমের নামে রেকর্ড প্রচার আছে। দলিল গ্রহীতা ফকির মোহাম্মদ। রেজিস্ট্রিতে তিনি একক মালিক। তার ৩ ভাই ওই জায়গায় ওয়ারিশ কিংবা দালিলিক সম্পর্কিত কেউ নন। তবে বিএস রেকর্ডে ওই ৩ জনের নামে ভূল রেকর্ড প্রচার আছে। ওই রেকর্ডের বিরুদ্ধে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, চকরিয়ায় রেকর্ড সংশোধনী মামলা রুজু করা হয়। মামলায় ওয়াজ উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবদুল হাকিম গংদের ওয়ারিশদেরসহ পক্ষভূক্ত বিবাদী করা হয় ৩০ জনকে। রাষ্ট্রপক্ষকেও ওই মামলায় আসামী করা হয়েছে। ২০০০ সালে অপর মামলাটি রুজু করা হয়েছে। যার মামলা নং ২১৩। মামলার বাদী মৃত ফকির মোহাম্মদের পুত্র বদরুদ্দৌজাসহ পক্ষভূক্ত ৪ জন। ২০০৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর অপর মামলা ২১৩ এর বাদী ও বিবাদীপক্ষ সমঝোতায় পৌছেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে আপোষনামামুলে চুক্তি সম্পাদিত হয়। বিবাদীপক্ষ জমিতে অংশীদারিত্ব হবেন না স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা জড়াবেন না এমন অঙ্গীকার দিয়ে তারা মামলা থেকে নিস্পত্তি চান। পরবর্তীতে বাদী ও বিবাদীপক্ষের ওই আপোষনামা সোলেহনামা হিসেবে বিচারাধীন মামলায় আদেশে গণ্য করা হয়েছে। চলতি বছরের ২০২২ সালে নুরুল মিজবাহ তার স্ত্রী ও তার ভাইয়ের স্ত্রীর নামে ১০ শতক জমি ক্রয় করেন। নি:স্বত্তবান ব্যক্তিরা ওই জমির বিক্রেতা। পরবর্তীতে খরিদপক্ষ ওই জমিতে নামজারী জমাভাগ খতিয়ান সৃজন করে। যার নং ৫০২২। রেকর্ডীয় ভোগদখলীয় মালিক মৃত ফকির মোহাম্মদের পুত্র আবুল হোসাইন গং। সৃজিত বিএস এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই খতিয়ানের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে সহকারী কমিশন ভূমি পেকুয়ায় একটি মিচ মামলা রেকর্ড করেন। যার রিভিউ মামলা নং ৪১/২২। এ দিকে সম্প্রতি ওই জায়গা জবর দখলে নিতে যুবদল নেতা নুরুল মিজবাহ রাতে মাটি ভরাট কাজ করছিলেন। এ সময় আবুল হোসাইন গং গিয়ে বাধা দেন। এর জের ধরে চলতি বছরের ৪ আগষ্ট নুরুল মিজবাহ বাদী হয়ে চকরিয়া কোর্টে একটি সিপি মামলা রুজু করেন। এ ব্যাপারে মামলার আসামী আকবর আলী জানান, এটি গায়েবী মামলা। ঘটনা কাল্পনিক। আমি ওয়ার্ড আ’লীগের সহসভাপতি। গতবার কাউন্সিলার ছিলাম। এখানে তার কাছ থেকে কেউ চাঁদা চাননি। মামলার ৪ নং বিবাদী মাওলানা আলী হোসাইন জানান, আমি কিছুই জানিনা। থাকি পটিয়ায়। এখানে একটি দাখিল মাদ্রাসায় সিনিয়র শিক্ষক। পটিয়া পৌরসভার গাউছিয়া রহমানিয়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে আছি। বারাইয়াকাটা কামিল মাদ্রাসায় আমি এসএমসি কমিটির সদস্য। আমার দাদা এ প্রতিষ্টানটির দাতা। আমি গাউছিয়া কমিটির সভাপতি। আবুল হোসাইন জানান, এটি গায়েবী মামলা। আমরা দিনমজুর। হয়রানি ও নিপীড়ন চালাচ্ছে গরীবের উপর। শামসুদ্দোহার স্ত্রী ছকুন তাজ বলেন, নুরুল মিজবাহ একজন মামলাবাজ। এর আগেও আমরা মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছি। প্রতিদিন এসে গালিগালাজ করছে। হুমকি ও ধমকি দিচ্ছে। নুরুল আমিন জানান, ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের উপর হাকাবকা করা হচ্ছে। আলী আকবরের মা জন্নাত আরা জানান, আমরা বিজ্ঞ আদালত ও পুলিশের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তদন্তে এসে মামলার বিষয়ে আমলে নেয়ার জন্য বলছি। আমার ছেলেরা নিরাপরাধ, অসহায়। উক্ত জায়গায় আমরা বসতঘরসহ দখলে আছি ও বসবাস করছি।