বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় সিলেট জেলার সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ২৪টি কওমি মাদরাসার মুহতামিমের সাথে মতবিনিময় করেন।
শনিবার দিনব্যাপী এ মতবিনিময় সম্পন্ন করেন তিনি। এ সময় জামায়াতের সমাজকল্যাণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনের তরফে দ্বিতীয় দফায় মুহতামিমদের হাতে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেন।
জানা যায়, জামায়াতের আমির সিলেট সদর উপজেলার ৫টি, কানাইঘাট উপজেলার ৫টি, কানাইঘাট পৌরসভার ১টি, জৈন্তাপুর উপজেলার ৫টি, গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩টি, জকিগঞ্জ উপজেলার ২টি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৩টিসহ মোট ২৪টি মাদরাসার প্রধানদের হাতের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। তিনি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্মানিত মুহতামিম ও শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং তাদের সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দেয়ার জন্য মহান রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে খাস সাহায্যের জন্য দোয়া করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তরোত্তর যাতে সমাজে ইলমে দ্বীনের শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সেজন্যও মহান রবের দরবারে বিগলিত চিত্তে দোয়া করেন।
এ সময় জামায়াতের আমিরের সাথে উপস্থিত ছিলেন অন্যতম কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট উত্তর জেলা আমির হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন খান, নায়েবে আমির উপাধ্যক্ষ মাওলানা ফয়জুল্লাহ বাহার, সিলেট মহানগরী সেক্রেটারি জনাব শাহজাহান আলী, জেলা উত্তরের সেক্রেটারি ও জৈন্তাপুর উপজেলার একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন ও সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ইসলাম উদ্দিনসহ জেলা ও স্থানীয় জামায়াত নেতারা।
মত বিনিময়কালে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এবারের বন্যার যে ভয়াবহতা আমি দেখেছি, আমি আমার জীবনে এবং আমার চেয়ে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ তারাও এ রকম ভয়াবহতা দেখেননি। এটি একটি জাতিরাষ্ট্র। সংবিধান অনুযায়ী এ রাষ্ট্রের প্রকৃত অভিভাবক হচ্ছে সরকার। এই ভয়াবহতায় জনগণ সরকারের কাছ থেকে অভিভাবকসুলভ আচরণ আশা করে। সকলেই সরকারের কাছে এ আহবান জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হওয়ার কারণে জনগণের এ কষ্টে সরকারকে তেমন সাড়া দিতে দেখা যায়নি। ক্ষতি এতটাই ব্যাপক যে, এটা কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। কোনো সরকারের পক্ষেও সম্ভব নয়। এটি কাটিয়ে উঠতে কেবল আল্লাহ তায়ালাই সহায়তা করতে পারেন। তবে সরকারের দায় অবশ্যই রয়েছে।’
পবিত্র কোরআনের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা ভূ-ভাগে ও পানিতে যেসব বিপর্যয় দেখ এগুলো তোমাদের দু’হাতের কামানো ফসল।’ জামায়াতে ইসলামী একটি মজলুম সংগঠন। আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে চেপে ধরা হয়েছে। আমাদেরকে দেশ এবং জাতির জন্য স্বস্তিতে কোনো কাজ করতে দেয়া হয় না। আমাদেরকে ফাঁসির কাষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হয়, খুন করা হয়, গুম করা হয়, আমাদেরকে জেলে ঢুকানো হয়। তারা আমাদের রিজিকের ওপর আঘাত করে, আমাদের যুবকদের দেহ থেকে চোখ তুলে ফেলে, গুলি করে অন্ধ করে দেয়, হাত কাটে, পা কাটে, অঙ্গহানি করে।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর ওপর যখন আঘাত এলো, জাতির সামনে তখন বিষয়টা স্পষ্ট হলো না। অপপ্রচারে জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। মানুষ মনে করল, এগুলো রাজনৈতিক বিষয়; এগুলো রাজনৈতিক লড়াই। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে সব প্রমাণিত হতে শুরু করল যে এগুলো রাজনৈতিক লড়াই নয়, এ লড়াই হচ্ছে ঈমানী ও দেশপ্রেমিক শক্তির বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের লড়াই। সুতরাং যারা অন্তরে খালেস ঈমান ধারণ করবেন, ইসলামের পথে মানুষকে আহবান জানাবেন তাদের কাউকেই ছাড় দেবে না। তাই গুলি করে আমাদের বন্ধু আলেম-ওলামাকে হত্যা করা হলো, জেলে ঢুকানো হলো। তাদের কেউ কেউ জেল থেকে মজলুম হালতে মুক্তিও পেয়েছেন। আবার অনেকে জেলের মধ্যে এখনো কষ্ট করছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘যে দেশে আলেম-ওলামারা জেলে থাকেন, অপরাধীরা সমাজে দাপিয়ে বেড়ায়, সেই সমাজের ওপর মহান আল্লাহর রহমত আসে না। স্বৈরাচারীরা তো দুনিয়ার সফলতার জন্য এগুলো করবেই। লড়াইটা আমাদের সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা জুলুমে ভীত-সন্ত্রস্ত নই, আমরা হতাশও নই। মুমিন তো শহীদ হতে চায়। এর চেয়ে উত্তম মৃত্যু আর হতে পারে না।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি