বিখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক হেমিংওয়ে স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় বলেছিলেন, জীবনের সব সৌভাগ্য এবং বঞ্চনা প্রতিদিনের ঘটনার মাধ্যমেই থাকে। সে গুলো কখনো আমরা নিরাসক্ত খবর হিসেবে পরিবেশন করি অথবা জীবনবোধে উজ্জীবিত হয়ে গল্পে রুপান্তরিত করি।মুলত সংবাদ হচ্ছে জীবনেরই প্রতিচ্ছবি”। উক্ত কথাটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় হেমিংওয়ের বক্তব্য শতভাগ সত্যি হিসেবে সৃকৃতি লাভ করে বিজ্ঞ সমাজে। প্রতিদিন সকাল বেলা চায়ের টেবিলে একটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি দেশ এবং বিশ্বের সব খবরাখবর।উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুর আলোচ্য উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী এবং তার পর্যবেক্ষণ সহ পাঠকের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করে চোখের সামনে। মানুষের কাছে সে খবর গুলো কখনো হয়ে উঠে আনন্দ উচ্ছ্বাসের, কখনো কষ্টের,নির্মম নিষ্ঠুরতার, খবর পড়ে অনেকের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে জল।জানা যায় অবহেলিত জাতি,গোষ্ঠী কিংবা জনপদের দূর্যোগ দুর্ভোগের খবর।অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং শিক্ষা সংস্কৃতি সহ প্রভৃতি। তাই সচেতন মহল সংবাদ পত্রকে “আধুনিক মানুষের চোখ”হিসেবে অবহিত করে থাকে।
জেলা শহর থেকে দুরে “সাপ্তাহিক মাতামুহুরি” আমাদেরই পাশের পত্রিকা, আপনজন প্রিয় প্রতিবেশী। বিগত একুশ বছর ধরে দেশ এবং আন্তর্জাতিক খবরের সাথে প্রত্যান্ত উপকুলীয় জনপদের খবর তুলে ধরার চেষ্টা করছে।আগেকার সময় এই অঞ্চলের খবর সংবাদে উঠে আসতো না।অজ পাড়াঁ গাঁয়ের অনেক খবর মানুষের আশা আকাঙ্খা চাহিদা, প্রতিভা সভ্যতার মুল স্রোতে প্রতিভাত হয় নাই ।মানুষ ছিল সংবাদপত্র বিমুখ। নব্বই দশক পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীক পত্রিকার প্রতি নির্ভরতার কারণে পত্রিকা ছিল অনেকের নাগালের বাইরে। গ্রামান্চলের মানুষের ধারণা সংবাদপত্র হল শহুরে বসবাসকারীদের। কিন্তু দিন বদলের সাথে চকরিয়া উপজেলা শহর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা আগের সে অভাব অনেক টা পুরন করেছে।
বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় একুশ বছর পিছনে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে ফেলে আাসা দিন গুলো তেমন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। নানা ঘাতপ্রতিঘাত চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকের পাঠক প্রিয় সাপ্তাহিক মাতামুহুরি। মফস্বল এলাকা চকরিয়া পেকুয়ার প্রত্যান্ত অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ের খবর তুলে আনা সহজ ছিল না। মাতামুহুরি পরিবার উপকূলীয় জনপদে বসবাসকারী মানুষের সুখ দুঃখ এবং আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরতে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। তাই সাধারণ মানুষ পত্রিকা টির বহুল প্রচার প্রসার এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে।অন্য ভাবে ও বলা যেতে পারে যে, সংবাদপত্র শুধু সংবাদ নিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায় তা নয়,পত্রিকা পাঠে যে কোন মানুষ তার নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে পারে।সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সমাজসেবা, সামাজিক অত্যাচার জুলুম নির্যাতনের বিষয়াবলী লিখে পত্রিকাতে পাঠানো যায়।সংবাদ সেই দিকে ও মানুষের প্রতিভা ও সৃজনশীলতার বিকাশে ভূমিকা রাখে। জন্মের পর থেকে চকরিয়া উপজেলার অনেকে মাতামুহুরি পত্রিকা তে লেখালেখি করার সুযোগ পেয়েছে। হাতের কাছের নাগালের ভেতরে বলে অনায়াসে সে সুযোগ গ্রহন করেছে । সেই নিরিখে সুবিধা বঞ্চিত সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের নিজেদের প্রকাশ করার একটি প্লাটফরম মাতামুহুরি সাপ্তাহিক।।।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই দিনে আমি সাপ্তাহিক মাতামুহুরির প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। চকরিয়ার রাজপথে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শহীদ দৌলত খানকে নিয়ে একটি কলাম লেখার মাধ্যমে বিগত দুই বছর আগে থেকে আমার মাতামুহুরির সাথে চলা।সেই থেকে আমার লেখা গুলো সাপ্তাহিক মাতামুহুরি তে ছাপিয়ে থাকেন। তাই আমি সাপ্তাহিক মাতামুহুরি পরিবারের প্রতি ঋনী। নিজে আহামরি কিছু লিখি তা নয়।এক সময় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। তখন রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতো।আজকের দিতে রাজনীতিরতে নীতির চর্চা প্রশ্ন বিদ্ধ, সমাজ অসংগতি, অনিয়ম এবং নৈতিক অবক্ষয়ে জর্জরিত।অবসর সময়ে রাজনীতি এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কিছু লেখার চর্চার চেষ্টা করি।বর্তমান প্রজন্ম পড়া বিমুখী, লিখা বিমুখী। মোবাইলে আসক্তির কারণে পত্রিকা এবং বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে পাঠক । তাই সমাজ বিজ্ঞানীদের ধারণা সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনে সৃষ্টিশীল কবি সাহিত্যিক বেড়ে না উঠলে সভ্যতার বিকাশ পথ হারাবে।সে হিসেবে চকরিয়ার তরুণ সমাজ এবং সচেতন মানুষের জন্য একটি নির্ভরশীল প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে মাতামুহুরি। যার মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপনের সহজ সুযোগ নিতে পারে।
স্কুল জীবনে হাতের লেখায় একটি দেয়ালিকা পত্রিকা করেছিলাম।নাম ছিল “কলমিলতা”।সম্পাদক ছিলাম আমি ।যার হাতের সুন্দর লেখায় দেয়ালিকাটি সাজিয়ে ছিলাম তিনি মাষ্টার এরফানুল কবির। বর্তমানে তিনি রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন উত্তর লক্ষ্যচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক মাষ্টার মোহাম্মদ হোসাইন। আর যার উত্সাহ এবং পরামর্শে দেয়ালিকা পত্রিকাটি করার সাহস পেয়েছিলাম তিনি ঢেমুশিয়া হাই স্কুলের তত্কালীন সিনিয়র শিক্ষক জনাব আবদুল জব্বার স্যার।তিনি ছিলেন “কলমিলতা”র প্রধান উপদেষ্টা।কলেজ জীবনে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুজিববাদী ছাত্রলীগে জড়িত হয়ে পড়ি। ১৯৮৭ সালের দিকে সামরিক স্বৈরাচার সাম্প্রদায়িক বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে।তখন মুজিববাদী ছাত্র লীগের চকরিয়া কলেজ সভাপতি ছিলাম।তখন একটি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন বের করি।যার নাম “সংহার”। সম্পাদক ছিলাম আমি এবং প্রধান সম্পাদক ছিলেন তখনকার জাতীয় ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি বর্তমান চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জননেতা সরওয়ার আলম।যতদুর জানি বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে উপশহর চকরিয়া থেকে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক প্রকাশনা ছিল “সংহার”। (ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী)।পুস্তিকাটিতে রাজনৈতিক নিবন্ধ এবং বঙ্গবন্ধু দর্শনের কর্মসূচি তুলে ধরার চেষ্টা করতেছিলাম। রাজনৈতিক অঙ্গনে পুস্তিকাটি তখন বেশ প্রশংসা লাভ করে।
বর্তমানে সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক পত্রিকা বাজারে।বিশেষজ্ঞ মহলের মতে খবরের বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক বিষয়ের বিশদ ব্যাখাতেই সংবাদপত্রকে গুরুত্ববহ করে তুলে।শুধু বিজ্ঞাপন নিয়ে কাগজ পুরো করলে হয় না।বর্তমানে জাতীয়, আঞ্চলিক এবং লোকেল অনেক পত্রিকায় সম্পাদকীয় উপসম্পাদকীয় দেখা যায় না।কিন্তু উপজেলা শহর থেকে প্রকাশিত “সাপ্তাহিক মাতামুহুরি ” তার ব্যতিক্রম।মাতামুহুরির প্রতিটি সংখ্যায় সম্পাদকীয় উপসম্পাদকীয় থাকে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। যার ফলে চার পৃষ্ঠা ছোট কাগজের মাধ্যমে পাঠক সব বিষয় জানতে পারে। সংবাদপত্র হচ্ছে পাঠকের পত্রিকা। বিস্তারিতভাবে খবর পৌঁছাতে খবরের কাগজ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। আর সে খবর ইতিবাচক নেতিবাচক হিসেবে নেয়ার দায়িত্ব পাঠকের।চাপিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সম্পাদকের নয়।যেহেতু সম্পাদক একজন ব্যক্তি হিসেবে নিজস্ব মতাদর্শে বিশ্বাস থাকা অস্বাভাবিক নয়।সেই নিরিখে সাপ্তাহিক মাতামুহুরির সম্পাদকের টেবিলে সম্পাদক মিজবাহ উল হক ভাইয়ের নিরপেক্ষতা প্রসংশার দাবি রাখে। মতপথ নির্বিশেষে সকল ধরনের সবার সংবাদ তিনি বস্তুনিষ্ঠতার সাথে সত্যিটা তুলে ধরার চেষ্টা করেন।তাই বলা যেতে পারে সম্পাদকের টেবিলে তিনি শুধুই সম্পাদক। সাদা, কাল, নীল কিংবা হলুদ সাংবাদিকতার মাঝে তিনি নিরপেক্ষতা সততা এবং লেজুড় নীতির উর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হয়েছে মনে করে বিশ্লেষক মহল। উপজেলা শহরের জন্য এমন অবস্থান প্রসংশনীয় এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাই মাতামুহুরি পত্রিকার সম্পাদক মিজবাহ উল হকের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
একটি জাতিকে জাগ্রত করতে সংবাদ পত্রের ভূমিকা অসীম। মাতামুহুরি পত্রিকা শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গনতন্ত্র এবং পেশীশক্তি বিরোধী আপোষহীন অবস্থানের কারণে সংবাদপত্র টি পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃত হয়েছে। এই চেতনা নিয়ে মাতামুহুরি বহতা নদীর মত এগিয়ে যাবে হাজার বছর ধরে।সৃজন, সৃষ্টির, অপ্রতিরোধ্য যাত্রা নিয়ে সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে,আশাবাদী সাপ্তাহিক মাতামুহুরি পাঠক মহল।
জয় বাংলা।
——————
লেখক -বদরুল ইসলাম বাদল
কলামিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা।
সদস্য বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি