ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার দরপত্র(টেন্ডার) সবার অগোচরে গোপনে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৬সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু তাহের ও সাধারন সম্পাদক সেফাউল ইসলাম সেফাসহ স্থানীয় ঠিকাদাররা এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার শাখা,ঠাকুরগাঁও বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ঠিকাদাররা তাদের অভিযোগে উল্লেখ্য করেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল প্রকল্পের আওতায় রাণীশংকৈল পৌরসভায় সোলার স্টিক লাইট স্থাপনের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। নিয়মনুযায়ী সেই বরাদ্দের জন্য পৌর পরিষদে সভা করে সময় তারিখ নির্ধারণ করে একটি দরপত্রের রুটিন তৈরী করে তা বহুল প্রচারিত সংবাদ পেপারে প্রকাশ ও পৌরসভার নোটিশ বোর্ডে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান তা না করে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে নাম সর্বস্ব প্রিন্ট পেপারে গত ২১ আগষ্ট একটি বিজ্ঞাপন ছাপিয়েই দায় সেরেছেন। তিনি তার পৌরসভার নোটিশ বোর্ডও ওই টেন্ডারের বিষয়ে কোন নোটিশ দেন নি। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাযালয়ে দরপত্র আহবানের বিষয়টি অবগত করার নিয়ম থাকলেও তাও তিনি করেন নি।
ঠিকাদাররা ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে কতিপয় একজন ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারেন যে গত ২১ আগষ্ট রাণীশংকৈল পৌরসভায় একটি দরপত্র আহবান করা হয়েছে। যার সিডিউল কেনার শেষ সময় আগামী ৮ সেপ্টেম্বর। দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। অথচ এ টেন্ডারের কথা জানেন না পৌরসভার কোন কর্মকর্তা বা প্যানেল মেয়র কিংবা কাউন্সিলররা। এমন কি দরপত্র বিক্রির সময় প্রায় শেষের দিক হলেও এখন পযর্ন্ত পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিক্রির জন্য কোন সিডিউল তৈরী করেননি।
রাণীশংকৈল ঠিকাদার কল্যাণ সমিতি এ দরপত্রের সময় তারিখ বাতিল চেয়ে সময় পূর্ণ নির্ধারণ করার অনুরোধ জানিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ সময় মুঠোফোনে কথা হয়, ঠিকাদার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিঠু ইসলামের সাথে তিনি বলেন, আমি নিজেও একজন ঠিকাদার আমাদের পৌরসভায় দরপত্র আহবান হলো অথচ আমি জানলাম না এটা কেমন কথা। তিনিও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পৌর সভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান ভারতে থাকায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান মতির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা জানি না। তবে মেয়র প্রায় তিন মাস আগে একবার বলেছিলেন জলবায়ু প্রজেক্টের একটি দরপত্র হবে। তবে এ নিয়ে পৌর পরিষদে কোন সভা করা হয়নি তাই কবে দরপত্র আহবান করা হয়েছে সেটি তিনি জানেন না।
উপজেলা ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, এ মেয়র সবার অগোচরে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে ২ কোটি টাকার দরপত্রটি আহবান করেছেন। তিনি কাগজে কলমে সব ঠিকঠাক রেখে নিজেই কাজগুলো করার পায়তারার অংশ হিসাবে পৌরসভার তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের তিনি দরপত্রের কথা জানাননি বলে তিনি মনে করছেন। আবু তাহের আরো বলেন।
সহকারী প্রকৌশলী এস এম জাবেদ আলী গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে বলেন,দরপত্রের বিষয়টি অনলাইনে আজ আপলোড দিবো। নোটিশ বোর্ডও নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেব। এতদিন কেন দেন নি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, মেয়র মহোদয় যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেই নির্দেশনায় তিনি কাজ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, জলবায়ু পরির্বতন প্রকল্পের পৌরসভার দরপত্রের কোন চিঠি আমার দপ্তরে আসেনি। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্থানীয় ঠিকাদাররা পৌরসভার একটি দরপত্রের বিষয় নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখা ঠাকুরগাঁও উপ-পরিচালক রামকৃষ্ণ বর্ম্মন বলেন, দরপত্র অব্যশই উন্মুক্তভাবে আহবান করতে হবে। কোনভাবেই গোপনীয়ভাবে দরপত্র আহবান করা যাবে না। এমন হলে ঠিকাদাররা লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।