কক্সবাজারের পেকুয়ায় ৫ মাসের অন্ত:স্বত্তা স্ত্রীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। যৌতুক না পেয়ে স্বামী ও শ্বাশুড় বাড়ীর কয়েকজন মিলে ওই নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিষ্ঠুর নির্যাতনসহ বর্বরতা চালান। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অন্ত:স্বত্তা ওই গৃহবধূ পিতাকে মুঠোফোনে খবর দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাত্র ৬ মাস পূর্বে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো ওই নারীকে ১ টি রুমের মধ্যে আটকিয়ে রেখে দফায় দফায় নির্যাতন চালানো হয়। খবর পেয়ে পেকুয়া থানা পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ৩১ মার্চ (শুক্রবার) পেকুয়া থানা পুলিশ জখমী নারীকে উদ্ধার করে । উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোঁয়াখালী মাতবরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। জখমী গৃহবধূর নাম জিয়াসমিন আক্তার (২২)। তিনি ওই এলাকার মোহাম্মদ সেকান্দরের স্ত্রী। এ ব্যাপারে পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগে যৌতুক লোভী স্বামীসহ ৩ জনকে আসামী করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত ৬ মাস আগে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মাতবরপাড়ার মৃত আবুল কাসেমের পুত্র মো: সেকান্দর ও শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া এলাকার আমির হোসেনের মেয়ে জিয়াসমিন আক্তারের মধ্যে বিবাহ হয়েছে। জিয়াসমিন আক্তার বর্তমানে ৫ মাসের অন্ত:স্বত্তা। বিবাহের কিছুদিন স্বামী-স্ত্রী দম্পতির সংসার সুখে ছিল। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সম্প্রতি যৌতুক দাবী নিয়ে স্বামী-স্ত্রী সংসারের মধ্যে বনিবনা ও কলহ চলছিল। জিয়াসমিন আক্তারের স্বজনরা জানান, জিয়াসমিনের স্বামী সেকান্দর যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে কয়েক দফা চাপ প্রয়োগ করে। এমনকি ৫০ হাজার টাকা যৌতুক, বাপের বাড়ি থেকে আনতে জিয়াসমিনকে প্রায় সময় প্রস্তাব দিত। এমনকি কয়েকদিন আগে একটি চালের বস্তা কিনে দিতেও স্ত্রীকে বলে স্বামী সেকান্দর। এতে করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এর এক পর্যায়ে যৌতুক লোভী স্বামী স্ত্রীকে হায়েনার মত প্রচন্ড মারধরসহ নির্যাতন চালায়। শ্বাশুড় বাড়ীর লোকজনও যৌতুকের জন্য স্বামীর পক্ষে গিয়ে ওই গৃহবধূর উপর মারধরসহ নির্যাতন করেছে। মারধর করে স্বামী ওই নারীকে বাড়ির একটি কক্ষে আটকিয়ে রাখে। জিয়াসমিন জানান, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রুম থেকে কৌশলে বের হয়ে প্রতিবেশী ১ নারীর মুঠোফোন থেকে তার পিতাকে ফোন করে। এমনকি নির্যাতনের বিষয়টি জানানো হয়।
ওই নারী আরো জানান, আমাকে যৌতুকের জন্য জখম করা হয়েছে। পিঠের চামড়ায় পিটুনির দাগ অজগর সাপের চামড়ার মতো গোলাপী ও লালচে হয়ে গেছে। পুলিশ এসে আমাকে নির্যাতন থেকে উদ্ধার করেছে। আমি ৫ মাসের অন্ত:স্বত্তা। মেহেদীর রং শুকায়নি হাত থেকে। বিয়ে গন্ধ যেতে না যেতেই এ ভাবে ১ জন নারীর উপর যৌতুকের জন্য নিষ্ঠুর অত্যাচার। আমি বিচার চাই। আমিসহ কোন নারীর উপর যাতে এ ধরনের অত্যাচার না ঘটে। পেকুয়া থানার এস,আই মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।