কক্সবাজারের পেকুয়ায় আদর্শ মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় সভাপতিকে নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত। তবে ২৪ বছর ধরে একই ব্যক্তি সভাপতি পদটি দখলে রাখে। সভাপতি পদ নিয়ে পেকুয়ায় আদর্শ মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় তর্ক ও বিতর্কে অনেকটা অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারণ করায় ওই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক এই দুই স্তরের মধ্যে দেখা দিয়েছে ¯œায়ু দ্বন্ধ। বর্তমান সভাপতির মেয়াদকাল চলছে ২৪ বছর। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি একক সভাপতি। এ পদটির বিবর্তন কিংবা পরিবর্তন একবারও হয়নি। বর্তমান সভাপতির নাম মাওলানা কামাল হোসাইন। তিনি এক সময় শিক্ষকতা করতেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তার অভিজ্ঞতা রয়েছে যথেষ্ট। তবে পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে আছে বিস্তর অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ। ওই ব্যক্তি এ প্রতিষ্ঠানটিকে এক প্রকার জিম্মী করে রাখে। প্রশাসনিক ও একাডেমিক সব কাজ নিজেই দেখভাল করেন। তিনি এ প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ মাদ্রাসায় মাওলানা কামাল হোসাইনকে একাধিক পদে থাকতে দেখা গেছে। একদিকে সভাপতি অন্যদিকে তিনি নিজকে প্রতিষ্ঠানটির খাদেম বলে পরিচয় দেন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক হিসেবেও পরিচয় বহন করেন। এক সময় এ প্রতিষ্ঠানটি কওমী শিক্ষাবোর্ড থেকে পরিচালিত হতো। ২০০৭ সালে মহিলাদের শিক্ষার পেকুয়ার অন্যতম এ প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের স্বীকৃতি লাভ করে। ২০২২ সালের জুলাইয়ের দিকে এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভ্ক্তূ হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটিতে ২১ জন এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও মাওলানা কামাল হোসেনের লাখ লাখ টাকার বাণিজ্যের তথ্য ফাঁস হয়েছে। ১৬ জন শিক্ষক রয়েছে। ৫ জন কর্মচারী নিয়োগ নিয়েও পুকুর চুরির প্রমাণ রয়েছে। প্রতিজন শিক্ষকের কাছ থেকে নিয়োগের সময় হাতিয়ে নিয়েছেন ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা। কর্মচারী নিয়োগে নেওয়া হয়েছে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। এ প্রতিষ্ঠানটিতে আরো ৪ টি পদ শূন্য রয়েছে। ভৌত বিজ্ঞান, গণিত, আইসিটি, লাইব্রেরিয়ানসহ ৪ টি পদে নিয়োগের জন্যও প্রচেষ্টা চলমান আছে। জানা গেছে, মাদ্রাসা পরিচালনা নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সিদ্ধান্ত ও দাপ্তরিক কার্যক্রমে ২/৩ জন ছাড়া অন্যরা অনুপস্থিত থাকেন। তার অনুগত লোকজনকে নিয়ে করা হয়েছে পরিচালনা কমিটি। এদের মধ্যে ৩ জন বয়োবৃদ্ধ। ৪ জন থাকেন দেশের বাইরে। ২/১ জন চট্টগ্রাম শহরে ব্যবসা করেন। অনুপস্থিত থাকলেও যে কোন সিদ্ধান্তসহ সভার কার্যবিবরনীতে দেওয়া হয় এদের স্বাক্ষর। তবে এ সব স্বাক্ষর কমিটির সভ্যরা না দিলেও আপনা আপনিভাবে হয়ে যায়। ১৩ সদস্যের মধ্যে পরিচালনা কমিটিতে মাওলানা কামাল হোসাইনের স্ত্রী, মেয়ের নামও রয়েছে। আবার কোরাম সংকট দূরীভূত করতে কামালের দুটি নাম রয়েছে। নোটিশ খাতায় ও কার্যবিবরণীতে ২ জন কামালের নাম আছে। ১ জনের নাম মাওলানা কামাল হোসেন অন্যজনের নাম কামাল উদ্দিন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুটি নাম থাকলেও ব্যক্তি হচ্ছেন ১ জন। ফক্সি নাম দিয়ে করা হচ্ছে মাদ্রাসা পরিচালনা। দাতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। মাদ্রাসাটির মূল জমিদাতা পেকুয়া জমিদারবাড়ির ওয়ারিশরা। এ ব্যাপারে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসাইন জানান, মৌলভী কামাল একজন দুর্ণীতিবাজ। তাকে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থা। কোরাম সংকট থাকে। মিটিং হয়না। এরপরও সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। এখানে তার জমি আছে ৪ শতক। আমরা দিয়েছি ৬০ শতক। কেন তিনি এ প্রতিষ্ঠানটিতে একক দাতা হবেন। এ ব্যাপারে পেকুয়া আদর্শ মহিলা মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মাসুম জানান, এমপিও নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। কিছু কিছু সমস্যা আছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি এ সব থেকে উত্তরণ ঘটাতে। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা কামাল হোসাইন জানান, আমি প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে সভাপতি হিসেবে আছি। নীতিমালা সংশোধিত হলে করণীয় কি সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তে যাব আমরা। এখানে অনিয়ম ও দুর্ণীতি নেই। কারও দ্বিমত থাকতে পারে। নতুন নীতিমালা সম্পর্কে আমি অবগত নই। এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার উলফাত জাহান চৌধুরী জানান, কামাল সাহেব সম্পর্কে অনেকে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার মো: নাছির উদ্দিন জানান, বিষয়টি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের। যেহেতু এ সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখভাল করতে আলাদা অধিদপ্তর রয়েছে। আমরা শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণে রাখি। এরপরও লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধতন মহলের সাথে কথা বলে করণীয় নির্ধারণ করবো।