রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈলে ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী হযরত আলীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার চকরিয়ায় যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম’র কার্যকরি পরিষদ গঠন পেকুয়ায় দুই ভাইকে কুপিয়ে জখম দল নয় জনগণের চাওয়ায় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ! — বিএনপি প্রার্থী রাজু পেকুয়ায় প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে ভুট্টা ক্ষেত থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার পেকুয়ায় বজ্রপাতে ২ লবণ চাষির মৃত্যু চকরিয়া উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের, শ্রেষ্ঠ স্কাউট শিক্ষক আনছারুল করিম উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্কাউট নির্বাচিত হয়েছে মোহাম্মদ ফাহিম মুনতাসির হৃদয় চকরিয়ায় সীমানা বিরোধ নিয়ে হামলা; আহত ৫

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন’ তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের

স্টাফ রিপোর্টার
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২৩ Time View

বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনটি দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে‘মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং অবমূল্যায়ন করেছে’, যা এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন সাংবাদিকদের কাছে মার্কিন প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে, বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।’

সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে এটি স্পষ্ট হবে, এটি পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।

ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একই সাথে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।

সাবরীন বলেন, বেশিরভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তৃত করা। যার মধ্যে অনেকগুলো মার্কিন সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমর্থিত।

তিনি বলেন,‘প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।’

বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।

মুখপাত্র বলেন,‘আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। যদিও মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। ‘প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।’

যেসব ক্ষেত্রে আরো উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার, ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

মুখপাত্র আরো বলেন, যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এই জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

তিনি বলেন,‘এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ ও প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।’

সাবরীন আরো বলেন, এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিৎ, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে মোকাবিলা করেছে।

তিনি বলেন,‘নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং বিএনপি ও অন্যান্য দলের বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’

সেহেলী সাবরীন বলেন, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বারবার বেশ কিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ‘শরণার্থী’ বা‘রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।

অন্য একটি উদাহরণে তিনি বলেন, কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেওয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।

আবার, কিছু ক্ষেত্রে, প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সাথে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।

মুখপাত্র বলেন, ‘একইভাবে, শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ এবং কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘একইভাবে, প্রতিবেদনে শ্রম অধিকার ইস্যু, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং কার্যক্রম সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।

সাধারণভাবে, বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি

Please Share This Post in Your Social Media

আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 bbcekottor.com
Technical suported by Mohammad Iliych