এই সূরায় দুটি বিষয় আলোচিত হয়েছে : (এক) ইহুদী-নাছারা ও মুশরিকদের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য (১-৫ আয়াত)।
(দুই) কাফির-মুশরিকদের শাস্তি ও ঈমানদারগণের পুরস্কার (৬-৮ আয়াত)।
আসুন, সূরাটি পড়ে নেই-
(১) لَمْ يَكُنِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِيْنَ مُنْفَكِّيْنَ حَتَّى تَأْتِيَهُمُ الْبَيِّنَةُ
লাম্ ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূ মিন্ আহ্লিল্ কিতা-বি অল্ মুশ্রিকীনা মুন্ফাক্কীনা হাত্তা-তা”তিয়াহুমুল্ বাইয়্যিনাতু।
‘আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং মুশরিকরা (তাদের মূর্খতা হতে) বিরত হতো না, যতক্ষণ না তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত হয়’।
আহলে কিতাব হচ্ছে আরব ও আজমের ইহুদী-নাছারাগণ। মুশরিক হচ্ছে মূর্তিপূজারী ও অগ্নি উপাসকগণ’ (ইবনে কাসীর)।
ইহুদীদের অনেকে ওযায়ের (আঃ)-কে ‘আল্লাহর পুত্র’ বলতো। খৃষ্টানরা ঈসা (আঃ)-কে ‘আল্লাহর পুত্র’ বলতো (তওবা ৯/৩০)। কেউ খোদ ঈসা (আঃ) ও উনার মা মারঈয়ামকে ‘উপাস্য’ বলতো (মায়েদাহ ৫/১১৬)। এদের কেউ আবার ঈসা (আঃ)-কে ‘তিন উপাস্যের অন্যতম’ বলতো (মায়েদাহ ৫/৭৩)। তারা তাদের পীর-আউলিয়াদেরকে ‘রব’-এর আসনে বসিয়েছিল (তওবা ৯/৩১)। ফলে আল্লাহ প্রেরিত কিতাব তওরাত ও ইনজীলের অনুসারী হওয়ার দাবীদার হওয়া সত্বেও তারা তাওহীদ তথা একত্ববাদ থেকে বহু দূরে ছিটকে পড়েছিল। বিভিন্ন শয়তানী যুক্তি দিয়ে তারা তাদের কল্পিত এসব শিরকী আক্বীদা-বিশ্বাস ও রেওয়াজকে টিকিয়ে রেখেছিল। তওরাত ও ইনজীলকে তারা বিকৃত করে ফেলেছিল (বাক্বারাহ ২/৭৫-৭৯)। ফলে এমন কোন সত্যগ্রন্থ তখন তাদের সামনে ছিল না। যা তাদেরকে ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে বিরত রাখতে পারে। অবশেষে যখন কোরআন মজিদ নাযিল হতে লাগলো। তখন তাদের অনেকে কুফরী বিশ্বাস থেকে বিরত হল। এবং ইসলাম কবুল করে ধন্য হলো। যেমন তৎকালীন প্রখ্যাত ইহুদী পন্ডিত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রাসূল (সাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের প্রথম দিনেই ইসলাম কবুল করেন। পরবর্তীতে ত্বাঈ গোত্রের খ্রিষ্টান নেতা ‘আদী বিন হাতেম এবং আবদুল ক্বায়েস গোত্রের খ্রিষ্টান নেতা জারূদ ইবনুল ‘আলা আল-‘আবদী প্রমুখ খ্রিষ্টান নেতৃবৃন্দ ইসলাম কবুল করেন।
পক্ষান্তরে মক্কা-মদীনা ও তার আশপাশের মূর্তিপূজারী ও অগ্নি উপাসক মুশরিকদের কাছে কোন ইলাহী কিতাব ছিল না। তাদের সবকিছু রীতি-নীতি ছিল সমাজনেতাদের মনগড়া। এবং তা ছিল পুরোদস্ত্তর শোষণমূলক। তবুও বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা রসম-রেওয়াজের প্রতি তাদের ছিল একটা অন্ধ আবেগ। যা ছাড়তে তারা প্রস্ত্তত ছিল না। কিন্তু কোরআনের স্পষ্ট সত্যের আলো বিকশিত হওয়ার পর তাদের অনেকের ঘোর কেটে যায় এবং তারা ইসলাম কবুল করে ধন্য হন।
(২) رَسُوْلٌ مِّنَ اللهِ يَتْلُوْ صُحُفاً مُّطَهَّرَةً
রসূলুম্ মিনাল্লা-হি ইয়াত্লূ ছুহুফাম্ মুত্বোয়াহ্হারতান্।
‘তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত একজন রাসূল, যিনি আবৃত্তি করেন পবিত্র পত্রসমূহ’।
অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ হতে সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসাবে তাদের নিকটে আগমন করেন রাসূল। যিনি তাদের নিকট তেলাওয়াত করেন পবিত্র কোরআন। এখানে ‘আল্লাহর পক্ষ হতে’ বলার মাধ্যমে রাসূল (সাঃ)-এর সম্মানকে আরও উন্নীত করা হয়েছে। সাথে সাথে সন্দেহবাদীদের মোক্ষম জবাব দেওয়া হয়েছে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘বরকতময় তিনি যিনি স্বীয় বান্দার (মুহাম্মাদের) উপর ফুরক্বান (কুরআন) নাযিল করেছেন। যাতে তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারেন’ (ফুরক্বান ২৫/১)।
‘পবিত্র পত্রসমূহ’। অর্থাৎ কোরআন, যা থেকে তিনি পাঠ করে শুনাতেন। যা ‘লওহে মাহফূযে’ অর্থাৎ আল্লাহর সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানে ‘সুরক্ষিত ফলকে’ লিপিবদ্ধ ছিল (বুরূজ ৮৫/২১-২২, ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৭৭-৭৮)। অন্যত্র এর ব্যাখ্যা এসেছে এভাবে, ‘এটা লিখিত আছে সম্মানিত পত্রসমূহে’। ‘যা উচ্চ ও পবিত্র ’। ‘যা লিখিত হয়েছে লিপিকারগণের হাতে’। ‘যারা মহান ও পূত-চরিত্র’ (‘আবাসা ৮০/১৩-১৬)।
(৩) فِيْهَا كُتُبٌ قَيِّمَةٌ
ফীহা-কুতুবুন্ ক্বাইয়িমাহ্।
‘যাতে রয়েছে সরল বিধান সমূহ’।
যেমনটা আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি আপনার উপরে কিতাব নাযিল করেছেন। যার মধ্যে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট বিধান সম্বলিত। আর এগুলিই হলো কিতাবের মূল অংশ’ (আল ইমরান ৩/৭)। অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) তাদের নিকটে এমন কিতাব থেকে আবৃত্তি করে শুনান, যা স্পষ্ট বিধানসমূহ দ্বারা সমৃদ্ধ।
(৪) وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِيْنَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلاَّ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ
অ মা-তার্ফারাক্বাল্লাযীনা ঊতুল্ কিতা-বা ইল্লা- মিম্ বা’দি মা-জ্বা-য়াত্হুমুল্ বাইয়িনাহ্।
‘আর কিতাবধারীরা বিভক্ত হয়েছে তাদের নিকটে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত হওয়ার পরেই’।
অর্থাৎ শেষনবীর আগমনের ব্যাপারে তারা ইতিপূর্বে সবাই একমত ছিল। এবং উনার আগমনের অপেক্ষায় উন্মুখ ছিল। কেননা কিতাবধারী ইহুদী-খৃষ্টানগণ তাদের কিতাবে লিখিত শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর শুভাগমনের বিষয়ে আগে থেকেই জানতো। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘(কল্যাণ তাদেরই প্রাপ্য) যারা সেই নিরক্ষর রাসূলের অনুসরণ করে চলে। যাঁর কথা তারা তাদের নিকটে রক্ষিত তওরাত ও ইনজীলে লিখিত পেয়ে থাকে’ … (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। এতদ্ব্যতীত হযরত ঈসা (আঃ) স্বীয় উম্মতকে এ বিষয়ে আগাম সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর স্মরণ কর যখন মারিয়াম-তনয় ঈসা বলল, হে ইসরাঈল সন্তানগণ। আমি তোমাদের নিকটে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী। এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদ দানকারী, যিনি আমার পরে আসবেন। যার নাম হবে আহমাদ’ (ছফ ৬১/৬)।
এদের মধ্যে কেউ ঈমান আনে ও কেউ কুফরী করে বিভক্ত হয়ে যায়। বস্ত্ততঃ ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে তাদের মতভেদের কারণই ছিল তাদের হঠকারিতা। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে মনোনীত একমাত্র দ্বীন হলো ইসলাম ধর্ম। আর কিতাবধারীরা এটি গ্রহণে আপোষে মতভেদ করেছে তাদের নিকট ইলম (কোরআন) এসে যাওয়ার পর পরস্পরে হঠকারিতা বশে’ (আল ইমরান ৩/১৯)।
(৫)وَمَا أُمِرُوْا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ-
অমা-উমিরূ য় ইল্লা-লিইয়া’বুদুল্লা-হা মুখ্লিছীনা লাহুদ্দীনা হুনাফা-য়া অইয়ুক্বীমুছ্ ছলা-তা অইয়ু”তুয্ যাকা-তা অযা-লিকা দীনুল্ ক্বাইয়িমাহ্।
‘অথচ তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং সালাত কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। আর এটাই হলো সরল দ্বীন’।
অর্থাৎ ইহুদী-খৃষ্টানদের মূল কিতাবে তাওহীদের একনিষ্ঠ অনুসারী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার বিপরীতে তারা শিরকে লিপ্ত হয়েছে। যেমন অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পীর-আউলিয়া ও মরিয়ম-তনয় মসীহ ঈসাকে রব-এর আসনে বসিয়েছে। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তারা যেসব বস্ত্তকে শরীক সাব্যস্ত করে, সেসব থেকে তিনি পবিত্র’ (তওবা ৯/৩১)।
এই আয়াতের মধ্যে দলীল রয়েছে আল্লাহর ইবাদত সমূহে ‘নিয়ত’ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে। কেননা ইখলাছ হলো কলবের আমল। যা দ্বারা কেবলমাত্র আল্লাহকে অন্বেষণ করা হয়। অন্য কাউকে নয়। আর যা না হলে বান্দার কোন আমলই কবুল হয় না। এখানে খালেছ আনুগত্য সহকারে এবং একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করার সাথে সাথে সালাত ও যাকাত আদায় করার কথা বলা হয়েছে। অর্থ্যাৎ এখানে তিনটি আমল একত্রে বলা হয়েছে। (এক)- নিয়তকে আল্লাহর জন্য খালেছ করা, যা হলো কলবের আমল। (দুই)- সালাত কায়েম করা, যা হলো দৈহিক আমল। এবং (তিন)- যাকাত আদায় করা, যা হলো আর্থিক আমল। তিনটিকেই একত্রে ইবাদত বলা হয়েছে। যাকে ইবাদতে ক্বালবী, ইবাদতে বদনী ও ইবাদতে মালী বলা যেতে পারে। ‘আর এটাই হলো সরল দ্বীন’।
(৬) إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِيْنَ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ فِيْهَا أُوْلَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ-
ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ মিন্ আহ্লিল্ কিতা-বি অল্মুশ্রিকীনা ফী না-রি জ্বাহান্নামা খ-লিদীনা ফীহা-; উলা-য়িকা হুম্ র্শারুল্ বারিয়্যাহ্।
‘আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করে এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে চিরকাল থাকবে। এরা হলো সৃষ্টির অধম’।
অত্র আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ কাফের ও মুশরিকদের দুনিয়া ও আখেরাতের অবস্থান সম্পর্কে খবর দিয়েছেন। দুনিয়ায় তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে একেবারেই মর্যাদাহীন ও সৃষ্টির অধম। এবং আখেরাতেও তারা হবে জাহান্নামের চিরস্থায়ী বাসিন্দা।
(৭) إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُوْلَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া ‘আমিলুছ্ ছোয়া-লিহা-তি উলা-য়িকাহুম্ খইরুল্ বারিয়্যাহ্।
‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে, তারাই হলো সৃষ্টির সেরা’।
অর্থাৎ ঈমান ও আমলে ছালেহ যার মধ্যে একত্রিতভাবে পাওয়া যাবে, সে ব্যক্তিই আল্লাহর নিকটে সৃষ্টির সেরা।
‘ঈমান’ অর্থ একমাত্র উপাস্য হিসাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দাসত্ব করা ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক বা তুলনীয় মনে না করা। রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে শেষনবী হিসাবে বিশ্বাস করা এবং উনাকে নির্দ্বিধায় অনুসরণ করা।
‘আমলে ছালেহ’ অর্থ পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীছ অনুমোদিত নেক আমল। যারা এটা করেন, তারাই হলেন সৃষ্টির সেরা মানুষ।
(৮) جَزَاؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيهَا أَبَداً رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ-
জ্বাযা-য়ুহুম্ ‘ইন্দা রব্বিহিম্ জ্বান্না-তু ‘আদ্নিন্ তাজরী মিন্ তাহ্তিহাল্ আন্হা-রু খ-লিদীনা ফীহা য় আবাদা-; রদ্বিয়াল্লা-হু ‘আন্হুম্ অরদু ‘আন্হু; যা-লিকা লিমান্ খশিয়া রব্বাহ্।
‘তাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকটে চিরস্থায়ী বসবাসের বাগিচাসমূহ। যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদী সমূহ। যেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর উপরে সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে’।
অত্র আয়াতে ঈমানদার ও সৎকর্মশীল বান্দাদের পরকালীন পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাদেরকে পরকালে ‘জান্নাতে আদন’ প্রতিদান হিসাবে দেওয়া হবে। মূলতঃ ‘আদন’ একটি জান্নাতের নাম, যা অন্যান্য জান্নাত থেকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। যা কেবল আল্লাহর ইলমে রয়েছে। ‘যেখানে তারা অনন্তকাল ধরে বসবাস করবে’। যার কোন বিরতি হবে না, বা সেখানে তাদের মৃত্যু হবে না। আল্লাহ তাদের আমলের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তারাও তাদের আমলের কল্পনাতীত প্রতিদান পেয়ে আল্লাহর উপরে সন্তুষ্ট হয়েছে।
এটা তার জন্য, যে তার পালনকর্তাকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ভয় করে। অতঃপর পাপ সমূহ থেকে বিরত হয়। সে ভয় করে, আল্লাহ কর্তৃক ফরয সমূহ পালনের মাধ্যমে। এবং তাঁর নিষেধ সমূহ বর্জনের মাধ্যমে। এই ভয়টা কেমন সে সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যখন তাদের সামনে আল্লাহর কথা বলা হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। অতঃপর যখন আল্লাহর আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’ (আনফাল ৮/২)।
অতএব শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক ইবাদত সমূহের নাম তাক্বওয়া নয়। বরং হৃদয়ে আল্লাহভীতিই হলো প্রকৃত তাক্বওয়া। যা আল্লাহ দেখে থাকেন। সে আল্লাহ প্রেরিত শরী‘আত অনুযায়ী ইবাদত করে এমনভাবে, যেন সে আল্লাহকে দেখছে। আর যদি তা না পারে। তবে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাকে অবশ্যই দেখছেন।