মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২২ অপরাহ্ন

সূরা ক্বাদর

বিবিসি একাত্তর ডেস্ক
  • Update Time : শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩৭৫ Time View
{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}

আমরা বলি শবে ক্বদর। আরবিতে লাইলাতুল ক্বদর। যার অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারনে বহু বছর তারা আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মতের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে আল্লাহর ইবাদত করে পূর্ববর্তীদের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভবপর নয় বলে সাহাবীদের মনে আক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দুর করার জন্য সুরা ক্বদর নাজিল হয়। আর এ সূরা নাজিল করে এই রাতের ইবাদত ও নেক আমলকে হাজার মাসের ইবাদতের তুলনায় উত্তম বলে ঘোষনা করা হয়।

আসুন জেনে নেই, কি আছে মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদরের এ রাতে? এ রাতটা কেমন?

•আল্লাহ তা‘আলা এই রাত্রিতে পবিত্র কোরআন নাযিল করেছেন।

•এই রাত্রির ইবাদত হাজারো মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেয়।

•এই রাত্রিতে রহমতের ভান্ডার নিয়ে অগনিত ফেরেশতা জিবরাঈল আ:-এর নেতৃত্বে পৃথিবীতে আগমন করেন।

•ফেরেশতারা পৃথিবীতে আল্লাহর রহমত বিতরণ করেন।

•এ রাতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশি অবতরণ করেন যে, তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশি। (মুসনাদে আহমাদ: ২/৫১৯)।

•’যে ব্যক্তি এই রাত্রির কল্যাণ থেকে বঞ্চিত, সে সব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত’ (নাসায়ী: ৪/১২৯, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৩০, ইবনেমাজা)।

•এ রাত্রিতে মানুষের আগামী এক বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। আল্লাহ বলেন: ‘আমি তো এটা (কুরআন কারিম) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে (লাইলাতুলকদরে), আমি তো সতর্ককারী। এ রাতে প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে ফায়সালা করা হয় আমার নির্দেশে’ (সূরা: দুখান-৩-৫)। ইরানসহ ভারতীয় উপমহাদেশে অনেকে সূরা দুখানের এই তিনটি আয়াতকে নিজেদের মত ব্যাখ্যা করে শবে বরাতের আয়াত বলে চালিয়ে দেন। অথচ এই আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, এটা সেই রাত যে রাতে কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। তাই শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত অর্থাৎ শবে বরাতের সাথে এই আয়াতের কোন সম্পর্ক নাই। তাছাড়া কোরানে শবে ক্বদর নিয়ে একটি পুরো সূরাই আছে৷ অথচ শবে বরাত নিয়ে কিছুই বলা নেই৷ তবে ‘হাসান হাদিস’ নামে পরিচিত দ্বিতীয় স্তরের হাদিসে শবে বরাতের উল্লেখ আছে৷ ইরানসহ ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্যকোন জায়গায় শবে বরাতের কোন উল্লেখ নাই। তাই আমাদের উচিত কোরআনে নাযিলকৃত সূরার মাধ্যমে হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরের রাতের ইবাদত করা।

•’এই রাতে যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ ঈমান নিয়ে আল্লাহর কাছে সাওয়াব প্রাপ্তির আশায় ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হবে’ (বুখারি: ১০৯১, মুসলিম:৭৬০)।

•”আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমযান শেষ দশক প্রবেশ করত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত ইবাদত করতেন, ইবাদতের জন্য নিজ পরিবার পরিজনদেরকেও জাগাতেন এবং কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন (কঠোর পরিশ্রম করতেন)।” (বুখারী ও মুসলিম)

•”আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আল্লাহর ইবাদতের জন্য) যত পরিশ্রম করতেন, অন্য কোন মাসে তেমন পরিশ্রম করতেন না। (অনুরূপভাবে) রমযানের শেষ দশকে যত পরিশ্রম করতেন অন্য দিনগুলিতে তত পরিশ্রম করতেন না।” (বুখারী ও মুসলিম)

•”আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, যদি আমি (ভাগ্যক্রমে) লাইলাতুল কদর জেনে নিই, তাহলে তাতে কোন (দোয়া) পড়ব? তিনি বললেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা‘ফু আন্নী।’ অর্থাৎ “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)

*** এবার পড়ে নেই এই সূরাটি। জেনে নেই, এই রাতের সম্মানে নাজিলকৃত সূরা ক্বদরে কি বলা হয়েছে -***

(১. إِنَّآ أَنزَلۡنَـٰهُ فِى لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ
ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি
‘আমি একে নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’।

কোরআন নাজিল শুরু হয় হেরা গুহায় ক্বদরের রাত্রিতে। কোরআনের প্রথম পাঁচটি আয়াত (সূরা ‘আলাক্ব ১-৫ আয়াত) নাজিল করে জিব্রীল (আঃ) চলে যান। খৃষ্টীয় হিসাবে এ দিনটি ছিল ৬১০ খৃষ্টাব্দের ১০ই আগষ্ট। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বয়স ছিল চান্দ্রবর্ষ হিসাবে ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন এবং সৌরবর্ষ হিসাবে ৩৯ বছর ৩ মাস ২২ দিন।

পুরা কুরআন জিব্রীল (আঃ) একত্রে লওহে মাহফূয থেকে রামাযান মাসের ক্বদর রাত্রিতে নিম্ন আকাশে এনে বায়তুল ইযযাতে রাখেন (ইবনু কাসীর)। অতঃপর সেখান থেকে লেখক ফেরেশতাগণ জিব্রীলকে বিশ রাত্রিতে বারে বারে আবৃত্তি করে শুনান। অতঃপর জিব্রীল সেটা নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে বারে বারে নাযিল করেন। কুরআন লওহে মাহফূযে সুরক্ষিত ছিল (বুরূজ ৮৫/২১-২২)। সেখান থেকে প্রয়োজন মাফিক আল্লাহ জিব্রীল মারফত তাঁর রাসূলের নিকটে প্রেরণ করেছেন। যা ২৩ বছরে শেষ হয়েছে।

২. وَمَآ أَدۡرَٮٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ
ওয়ামা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি
‘আপনি কি জানেন ক্বদরের রাত্রি কি?’

‘লায়লাতুল ক্বদর’ অর্থ আল্লাহ বলেছেন, ‘বরকতময় রাত্রি’ (দুখান ৪৪/৩)। কেন এটি ‘বরকতময়’ তার ব্যাখ্যাও আল্লাহ দিয়েছেন, ‘এরাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়’ (দুখান ৪৪/৪)। অর্থাৎ সৃষ্টির পূর্বে নির্ধারিত তাক্বদীর হ’তে আগামী এক বছরের হায়াত-মউত-রূযী ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের তাক্বদীর ফেরেশতাদের হাতে এ রাতে অর্পণ করা হয়। এ রাতে কুরআন নাযিলের সূচনা হওয়াটাও ছিল তাক্বদীরের একটা অংশ। আর কুরআন নাযিলের ফলে এ রাতের মর্যাদা শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাই লাইলাতুল ক্বদরই হচ্ছে ভাগ্য রজনী।

৩. لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٌ۬ مِّنۡ أَلۡفِ شَہۡرٍ۬
লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর
‘ক্বদরের রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’।

আরবরা ألف বা ‘হাজার’ শব্দ ব্যবহার করে থাকে ‘কোন বস্ত্তর চূড়ান্তসীমা’ বুঝানোর জন্য। অর্থাৎ কেবল এক হাযার মাসের নয়, বরং এ রাতের ইবাদত ও নেক আমল হাযার হাযার রাতের ইবাদতের তুলনায় উত্তম।অনেকে হাযার মাসের ব্যাখ্যা ৮৩ বছর ৪ মাস করেছেন। এগুলি আরবদের বাকরীতির বিরোধী। বস্ত্ততঃ এখানে ‘হাজার রাত্রি’ বলে অসংখ্য ও অগণিত রাত্রি বুঝানো হয়েছে।

৪. تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيہَا بِإِذۡنِ رَبِّہِم مِّن كُلِّ أَمۡرٍ۬
তানাযযালুল মালাইকাতু ওয়াররূহ, ফিহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন
‘এ রাতে অবতরণ করে ফেরেশতাগণ এবং রূহ, তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে বিভিন্ন নির্দেশনা সহকারে’।

অর্থাৎ এ রাতে রহমত ও বরকতের ডালি নিয়ে জিব্রীলের নেতৃত্বে অগণিত ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করে আল্লাহর বিশেষ অনুমতিক্রমে। ‘যাতে বিভিন্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত থাকে এবং মৃত্যু ও রূযির হিসাব নির্ধারিত থাকে’ (ইবনে কাসীর)। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়’ (দুখান ৪৪/৪)।

এখানে ‘রূহ’ অর্থ জিব্রীল (আঃ)। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন- ‘অতঃপর আমি তার (মরিয়ামের) নিকটে আমার রূহকে (জিব্রীলকে) পাঠালাম। অতঃপর সে তার (মরিয়ামের) নিকটে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল’ (মারিয়াম ১৯/১৭)। আলোচ্য আয়াতে ‘ফেরেশতাগণ’ বলার পরে পৃথকভাবে ‘রূহ’ বলে ফেরেশতাগণের সর্দার হিসাবে জিব্রীল (আঃ)-এর স্বতন্ত্র মর্যাদা নির্দেশ করা হয়েছে।এরাতে আল্লাহর বিশেষ অনুমতিক্রমে বিশেষ ফেরেশতামন্ডলী বিশেষ নির্দেশসমূহ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে।

এ রাতে ফেরেশতাগণ অধিক সংখ্যায় অবতরণ করে অধিক বরকতের কারণে। অধিকহারে বরকত ও রহমতের অবতরণের সাথে সাথে ফেরেশতাগণও অধিকহারে অবতরণ করে থাকে। যেমন তারা কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহকে স্মরণ করার মজলিসসমূহ ঘিরে রাখে। সেখানে প্রশান্তির বিশেষ রহমত নাযিল করে। তারা ইলম অন্বেষণকারীর প্রতি সম্মানের জন্য তাদের ডানাসমূহ বিছিয়ে দেয়।

৫. سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
সালা-মুন্ হিয়া হাত্তা- মাতলাই’ল্ ফাজর্।
‘এ রাতে কেবলই শান্তি বর্ষণ। যা চলতে থাকে ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত’।

এ রাতে কেবলই মঙ্গল। ফজর পর্যন্ত কোন অমঙ্গল নেই। এ রাতে আল্লাহ শান্তি ব্যতীত অন্য কিছুই নির্ধারণ করেন না। এটি নিরাপদ রাত্রি। এ রাতে শয়তান কোন মন্দ বা কষ্টদায়ক কাজ করতে সক্ষম হয় না।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 bbcekottor.com
Technical suported by Mohammad Iliych