বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন

সূরা শামস

বিবিসি একাত্তর ডেস্ক
  • Update Time : রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩১৬ Time View
{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}

এই সূরাটির আলোচ্য বিষয় হলো দু’টি:

(এক)- বড় বড় সৃষ্টবস্ত্তর শপথ করে আল্লাহ বলছেন, যে ব্যক্তি তার নফসকে পবিত্র করেছে এবং সর্বোত্তম চরিত্রমাধুর্য দ্বারা তাকে পরিচ্ছন্ন করেছে, সে ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি স্বীয় নফসকে অপবিত্র করেছে এবং মূর্খতা ও নিকৃষ্ট কর্মসমূহের মাধ্যমে তাকে কলুষিত করেছে, সে ব্যক্তি ব্যর্থকাম হয়েছে (১-১০ আয়াত)।

(দুই)- ব্যর্থকাম লোকদের উদাহরণ দিতে দিয়ে বিগত দিনে সামূদ জাতির ধ্বংসের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে (১১-১৫ আয়াত)।

আসুন, সুরাটি পড়ে নেই-

(১) وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا
অশ্ শাম্সি অ দ্বুহা-হা-।
‘শপথ সূর্যের ও তার কিরণের’।

(২) وَالْقَمَرِ إِذَا تَلاَهَا
অল্ ক্বমারি ইযা-তালা-হা-।
‘শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে’।

(৩) وَالنَّهَارِ إِذَا جَلاَّهَا
অন্নাহা-রি ইযা-জ্বাল্লা-হা-।
‘শপথ দিবসের, যখন তা সূর্যকে প্রকাশ করে দেয়’।

(৪) وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا
অললাইলি-ইযা ইয়াগ্শা-হা-।
‘শপথ রাত্রির যখন তা সূর্যকে ঢেকে দেয়’।

(৫) وَالسَّمَآءِ وَمَا بَنَاهَا
অস্সামা-য়ি অমা-বানা-হা-।
‘শপথ আকাশের ও তার নির্মাণের’।

(৬) وَالْأَرْضِ وَمَا طَحَاهَا
অল্ র্আদ্বি অমা-ত্বোয়াহা-হা-।
‘শপথ পৃথিবীর ও তার বিস্তৃতির’।

(৭) وَنَفْسٍ وَّمَا سَوَّاهَا
অ নাফ্সিঁও অমা-সাওয়্যা-হা-।
‘শপথ মানুষের ও তার বিন্যস্ত করণের’।

(৮) فَأَلْهَمَهَا فُجُوْرَهَا وَتَقْوَاهَا
ফায়াল্হামাহা-ফুজুরহা- অতাকওয়া-হা-।
‘অতঃপর তার মধ্যে তিনি দুষ্কৃতি ও সুকৃতির প্রেরণা নিক্ষেপ করেছেন’।

অর্থাৎ আল্লাহ মানুষের নফসের মধ্যে নেকি ও গুনাহ উভয়টি স্পষ্ট করেছেন এবং চিনিয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রত্যেক নফসেরই ভালো ও মন্দ কাজ করার কথা রেখে দিয়েছেন; এবং যা তাকদীরে লেখা রয়েছে তা সহজ করে দিয়েছেন [ইবনে কাসীর]। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছি। এক্ষণে সে কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পারে কিংবা অকৃতজ্ঞ হতে পারে’ (দাহর ৭৬/৩)। বস্ত্ততঃ এ দু’টি পরস্পর বিরোধী প্রেরণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে পরীক্ষা করা।

বস্তুতঃ আল্লাহ মানুষের মধ্যে গোনাহ ও ইবাদতের যোগ্যতা, এ দুটোই গচ্ছিত রেখেছেন। কিন্তু তাকে কোন একটি করতে বাধ্য করেননি। বরং তাকে উভয়ের মধ্য থেকে যে কোন একটি করার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা দান করেছেন। তাই গোনাহের সময় কোনভাবেই তাকদীরের দোহাই দেয়া যাবে না। বরং নিজের দোষ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে ভবিষ্যতের জন্য তাওফীক কামনা করতে হবে।

(৯) قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا
ক্বদ্ আফ্লাহা-মান্ যাক্কা-হা-।
‘সফলকাম হয় সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে পরিশুদ্ধ করে’।

অর্থাৎ, যে নফসকে শিরক, অবাধ্যতা থেকে এবং চারিত্রিক অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করবে, সে পরকালে সফলতা ও মুক্তি লাভ করবে।

(১০) وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا
অক্বদ্ খ-বা মান্ দাস্সা-হা-।
‘এবং ব্যর্থ হয় সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে কলুষিত করে’।

এর অর্থ, যে ব্যক্তি হেদায়াত বঞ্চিত হয়েছে, পাপে লিপ্ত হয়েছে এবং আল্লাহর আনুগত্য পরিত্যাগ করেছে, সেই ব্যক্তি ব্যর্থ হয়েছে (ইবনে কাসীর)।

(১১) كَذَّبَتْ ثَمُوْدُ بِطَغْوَاهَا
ক্বায্যাবাত্ সামূদু বিত্বোয়াগ্ওয়া-হা য়।
‘সামূদ জাতি মিথ্যারোপ করেছিল অবাধ্যতা বশে’।

পূর্বের আয়াতে ব্যর্থ এবং পাপে ডুবে যাওয়া লোকদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ এখানে বিগত দিনের দুর্ধর্ষ ও ক্ষমতাশালী জাতি ছামূদ সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। ক্ষমতা ও শক্তিগর্বে স্ফীত হয়ে তারা আল্লাহর উপরে মিথ্যারোপ করেছিল। এবং তাদের নবী সালেহ (আঃ)-এর অবাধ্যতা করেছিল। যে দুষ্কৃতিতে তারা লিপ্ত হয়েছিল তা ত্যাগ করতে তারা প্ৰস্তুত ছিল না। এবং সালেহ (আঃ) যে তাকওয়ার দিকে তাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন তা গ্রহণ করতেও তারা চাইছিল না। নিজেদের এই বিদ্রোহী মনোভাব ও কার্যক্রমের কারণে তাই তারা তার নবুওয়াতকে মিথ্যা বলছিল। ফলে এর শাস্তিস্বরূপ তাদের উপরে নেমে আসে কঠিন আযাব। যাতে তারা সবাই নিমেষে ধ্বংস হয়ে যায়। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন- সূরা আ’রাফঃ ৭৩–৭৬, হূদঃ ৬১–৬২, আশ শু’আরাঃ ১৪১–১৫৩, নামলঃ ৪৫–৪৯, কামার ২৩–২৫)।

(১২) إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا
ইযিম্ বা‘আছা আশ্ক্ব-হা-।
‘যখন তাদের সর্বাধিক দুরাচার ব্যক্তিটি তৎপর হয়ে উঠেছিল’।

মুফাসসিরগণের মতে এই সর্বাধিক দুরাচার ব্যক্তিটির নাম ছিল ‘কুদ্দার বিন সালেফ’ (কুরতুবী, ইবনে কাসীর)। সে এমন দুষ্কর্ম করল যার কারণে সে হতভাগ্যদের সর্দার হয়ে গেল। এই দুষ্ট ব্যক্তিটি নবীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আল্লাহ প্রেরিত উষ্ট্রীর পা কেটে দিয়েছিল।

(১৩) فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ نَاقَةَ اللهِ وَسُقْيَاهَا
ফাক্ব-লা লাহুম্ রসূলুল্লা-হি না-ক্বতাল্লা-হি অসুকইয়া-হা-।
‘অতঃপর তাদেরকে আল্লাহর রাসূল বলেছিলেন, আল্লাহর উষ্ট্রী ও তার পানি পান করার ব্যাপারে সাবধান হও’।

কোরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সামূদ জাতির লোকেরা সালেহ (আঃ)কে বলে দিয়েছিল যে, যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে কোন নিশানী (মু’জিযা) পেশ করো। একথায় সালেহ (আঃ)-এর কওমের লোকদের দাবী অনুযায়ী নবীর দো‘আয় পাহাড়ের বুক ফেটে এই উষ্ট্রীর আবির্ভাব ঘটে। যা ছিল নবী সালেহ (আঃ)-এর একটি জীবন্ত মু‘জেযা। উষ্ট্রী যেদিন পানি পান করত, সেদিন কূয়ার পানি নিঃশেষে পান করে ফেলত। অবশ্য ঐদিন লোকেরা উষ্ট্রীর দুধ পান করত এবং বাকী দুধ দ্বারা তাদের সব পাত্র ভরে নিত। কিন্তু এই হতভাগাদের কপালে এত সুখ সহ্য হলো না। তারা একদিন পানি না পাওয়াকে অজুহাত হিসাবে খাড়া করে উষ্ট্রীকে হত্যা করলো। মূলতঃ এটি ছিল তাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। যাতে তারা সফল হয়নি। [বিস্তারিত জানতে দেখুন: সূরা আ’রাফঃ ৭৩, আশ-শু’আরাঃ ১৫৪–১৫৬, এবং ক্বামারঃ ২৯]

(১৪) فَكَذَّبُوْهُ فَعَقَرُوْهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُم بِذَنْبِهِمْ فَسَوَّاهَا
ফাকায্যাবূহু ফা‘আক্বরূহা- ফাদাম্দামা ‘আলাইহিম্ রব্বুহুম্ বিযাম্বিহিম্ ফাসাওয়্যা-হা-।
‘কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল, অতঃপর উষ্ট্রীর পা কর্তন করেছিল। ফলে তাদের পাপের কারণে তাদের পালনকর্তা তাদের সমূলে ধ্বংস করে জনপদকে একাকার করে দিলেন’।

পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, উষ্ট্রীকে হত্যা করার পর সামুদের লোকেরা সালেহ (আঃ)কে বললো, “তুমি আমাদের যে আযাবের ভয় দেখাতে এখন সেই আযাব আনো” [সূরা আরাফ: ৭৭]। তখন “সালেহ (আঃ) তাদেরকে বললেন, তিনদিন পর্যন্ত নিজেদের গৃহে আরো আয়েশ করে নাও, তারপর আযাব এসে যাবে এবং এটি এমন একটি সতর্কবাণী যা মিথ্যা প্রমাণিত হবে না।” [সূরা হূদ: ৬৫]

এ কুকাজ ঐ ‘কুদ্দার’ নামক ব্যক্তি করেছিল। উষ্ট্রীর পা কেটেছিল তার নেতৃত্বে মোট দু’জন। কওমের বাকীরা কেউ বাধা না দেওয়ায় একাজে তাদের সম্মতি ধরে নেয়া হয়। কিন্তু যেহেতু এ কাজে জাতির সকল লোকেরাও তাতে জড়িত ছিল। সে জন্য তাদের সকলকে সমান অপরাধী গণ্য করা হলো। ফলশ্রুতিতে এ আযাব জাতির আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাইকে বেষ্টন করে নিয়েছিলো [ইবনে কাসীর]।

এখান থেকে একটি নীতি জানা যায় যে, একই মন্দকর্মে যদি জাতির কয়েকজন ব্যক্তিও জড়িত থাকে। কিন্তু পুরো জাতির সমস্ত লোক যদি তাতে আপত্তি না করে। বরং পছন্দ করে। তাহলে তাদের সকলেই আল্লাহর নিকট মন্দ কাজে জড়িত হিসাবে পরিগণিত হয়।

(১৫) وَلاَ يَخَافُ عُقْبَاهَا
অলা-ইয়াখ-ফু ‘উকবা-হা।
‘আর তিনি এর মন্দ পরিণতিকে ভয় করেন না’।

অর্থাৎ যালেমদের ধ্বংস করার পর তাদের পক্ষ হতে কোনরূপ প্রতিরোধের ভয় তিনি করেন না। কেননা আল্লাহর ক্ষমতার সামনে অন্য সকলের ক্ষমতা নিতান্তই তুচ্ছ। তিনি সবার উপর কর্তৃত্বশালী, সর্ব-নিয়ন্ত্রণকারী ও একচ্ছত্র অধিপতি। তাঁর আধিপত্য, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার বাইরে কোন কিছুই হতে পারে না। তাঁর হুকুম-নির্দেশ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞারই নিদর্শন। কারন ‘তিনি যা করেন তাতে প্রশ্ন তোলার কেউ নেই। বরং তারাই জিজ্ঞাসিত হবে’ (আম্বিয়া ২১/২৩)। একথার মাধ্যমে হঠকারী ব্যক্তিদের প্রচন্ডভাবে ধমক দেওয়া হয়েছে।

এই সূরায় শিক্ষনীয়:-
ভালো কিংবা মন্দ, এ দুটোই আমাদের নিজেদের কৃতকর্মের ফল। জাতির মধ্যে আল্লাহর নাফরমানী ও পাপাচার যখন সীমাহীনভাবে ছাড়িয়ে যায়। অথচ আমরা যদি এর কোন প্রতিবাদ বা বাধা না দেই। তখন আমরাও সমানভাবে অপরাধী হিসাবে আল্লাহর আযাবের সম্মুখীন হবো। যেমনটা আল্লাহ বলেন, ‘পানিতে ও ভূমিতে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে মানুষের কৃতকর্মের ফলে। এজন্য যে, তিনি তাদের কিছু কর্মের স্বাদ আস্বাদন করাতে চান। যাতে তারা ফিরে আসে’ (রূম ৩০/৪১)।

আর এই বিপর্যয় সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেয় সমাজনেতারা। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন আমি তাদের নেতৃবর্গকে আদেশ করি। অতঃপর তারা সেখানে পাপাচার করে। তখন তাদের উপর আমার শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি সেটিকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করে দিই’ (ইসরা ১৭/১৬)। এইসব নেতৃবর্গকে অন্যত্র أَكَابِرَ مُجْرِمِيهَا ‘শীর্ষ পাপী’ (আন‘আম ৬/১২৩) বলা হয়েছে।

হে রাব্বুল আলামীন! আমরা নিজেদের কৃতকর্মের কারনে পৃথিবীতে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছি, সেজন্য আমাদেরকে কঠিনতম আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমাদের ক্ষমা করে দিন।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 bbcekottor.com
Technical suported by Mohammad Iliych