শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পেকুয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী রুমানা’র জনসংযোগ পেকুয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রসহ ৩ মহিলাকে পিটিয়ে জখম পেকুয়ায় অভিযানে দুই করাতকল সীলগালা পেকুয়ায় হাফেজখানার শিক্ষক মুজিবের মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে বৃষ্টি প্রার্থনায় দোয়া, ইসতিসকার নামাজ আদায় পেকুয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রুমানার গনসংযোগ ও মতবিনিময় সভা ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলে দলিত আদিবাসীদের অনুকূলে সংবাদ প্রকাশের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন’ তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা

সূরা নাসর

বিবিসি একাত্তর ডেস্ক
  • Update Time : বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪
  • ৬৯ Time View

বিজয় কিংবা সাফল্য মানুষের শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করে না। বিপুল শক্তিশালী দলও যুদ্ধে পরাজিত হয়। অন্যদিকে, দুর্বল দলও আল্লাহ’র সাহায্যক্রমে জয়ী হতে পারে। বদরের যুদ্ধ যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। শক্তিমত্তা নয়, বরং আল্লাহ’র সাহায্যই বিজয়ের একমাত্র নিয়ামক- এ কথাই সূরা নাসরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

সূরা নাসর কোরআনের সর্বশেষ একদফায় পূর্ণাঙ্গভাবে অবতীর্ণ সূরা। অর্থাৎ, এরপর কোন সম্পূর্ণ সূরা একদফায় অবতীর্ণ হয়নি, অন্যান্য সূরার আয়াত নাযিল হয়েছে। [মুসলিম; ৩০২৪]

এই সূরার আয়াতসমূহ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বর্নিত। মক্কা বিজয়ের লক্ষণসমূহ পরিস্ফুট হয়ে ওঠা এবং এ বিজয়ের মাধ্যমে দুনিয়াতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর আগমন ও অবস্থানের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সমাছন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে এই সূরাটি নাযিল হয়।

৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর দলে দলে মক্কার কাফিররা ইসলাম গ্রহণ করে। বিজয়ের মুহূর্তে আল্লাহ তাঁর রাসুল (সাঃ)-কে দুটি নির্দেশ দিয়েছেন। এবং নিজের একটি গুণের কথা পুনরুক্ত করেছেন।

প্রথমটি হলো- আল্লাহ’র গুণকীর্তন করা যে, তিনি সবরকম দুর্বলতা বা দোষ থেকে মুক্ত (অর্থাৎ তিনি কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন)।

দ্বিতীয়তঃ হলো- আল্লাহ’র কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ তাওবা করতে বলা হয়েছে। পুনরুক্ত করে বলা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী।

আসুন ছোট এই সূরাটির অর্থ জেনে নেই-

১. إِذا جاءَ نَصرُ اللَّهِ وَالفَتحُ
“ইযা জা-আ নাছরুল্লা-হি ওয়াল ফাৎহু”
‘যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।’

এ ব্যাপারে প্রায় সকলেই একমত যে, এখানে বিজয় বলতে মক্কা বিজয়কে বোঝানো হয়েছে। [মুয়াসসার, ইবনে কাসীর] আর বিজয় মানে কোন একটি সাধারণ যুদ্ধে বিজয় নয়। বরং এর মানে হচ্ছে এমন একটি চুড়ান্ত বিজয়, যার পরে ইসলামের সাথে সংঘর্ষ করার মতো আর কোন শক্তির অস্তিত্ব আরবের বুকে থাকবে না এবং একথাও সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আরবে এ দ্বীনটিই প্রাধান্য বিস্তার করে থাকবে।

২. وَرَأَيتَ النّاسَ يَدخُلونَ فى دينِ اللَّهِ أَفواجًا
“ওয়া রাআয়তান্না-সা ইয়াদখুলূনা ফী দী-নিল্লা-হি আফওয়া-জা”
‘এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।’

অর্থাৎ লোকদের একজন দু’জন করে ইসলাম গ্ৰহণ করার যুগ শেষ হয়ে যাবে। তখন এমন এক যুগের সূচনা হবে যখন একটি গোত্রের সবাই এবং এক একটি বড় বড় এলাকার সমস্ত অধিবাসী কোন প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ ও চাপ প্রয়োগ ছাড়াই স্বতস্ফুৰ্তভাবে মুসলিম হয়ে যেতে থাকবে। মক্কা বিজয়ের পূর্বে এমন লোকদের সংখ্যাও প্রচুর ছিল, যারা রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর রেসালত ও ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাসের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু কুরাইশদের ভয়ে অথবা অন্য কোন কারণে তারা ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত ছিল। মক্কাবিজয় তাদের সেই বাধা দূর করে দেয়। সেমতে তারা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে শুরু করে। সাধারণ আরবরাও এমনিভাবে দলে দলে ইসলামে দাখিল হয়। আমর ইবনে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “মক্কা বিজয়ের পরে প্রতিটি গোত্রই রাসূলুল্লাহ্ (সা:)- এর কাছে এসে ঈমান আনার ব্যাপারে প্ৰতিযোগিতা শুরু করে। মক্কা বিজয়ের আগে এ সমস্ত গোত্রগুলো ঈমান আনার ব্যাপারে দ্বিধা করত। তারা বলত, তার ও তার গোত্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণ কর। যদি সে তার গোত্রের উপর জয়লাভ করতে পারে তবে সে নবী হিসেবে বিবেচিত হবে”। [বুখারী; ৪৩০২]

৩. فَسَبِّح بِحَمدِ رَبِّكَ وَاستَغفِرهُ ۚ إِنَّهُ كانَ تَوّابًا
“ফাসাব্বিহ বিহাম্ দি রব্বিকা ওয়াস্তাগফির্হু, ইন্নাহূ কা-না তাউওয়া-বা”
‘তখন আপনি আপনার পালনকর্তার প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি অধিক তওবা কবুলকারী।’

অর্থাৎ, (হে রাসূল) বুঝে নিন যে, রিসালতের তাবলীগ ও হক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যা আপনার উপর ছিল তা পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার দুনিয়া থেকে আপনার বিদায় নেওয়ার পালা এসে গেছে। এ জন্য আপনি আল্লাহর তসবীহ, প্রশংসা এবং ক্ষমা প্রার্থনায় অধিকাধিক মনোযোগী হন।

সূরা নাসরের শিক্ষা:-
১. বিজয় আল্লাহর পক্ষ থেকে:-সকল বিজয় ও সাহায্য একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তিনি যখন চাইবেন। যে মাধ্যমে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এবং যে উদ্দেশ্যের জন্য তিনি নির্ধারিত করবেন। সেসময়, সেই মাধ্যমে ও সেই উদ্দেশ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সাহায্য ও বিজয় আসবে।

২. আল্লাহর প্রশংসা:- বিজয় ও সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হওয়ার কারণেই আমাদের উচিত বেশি বেশি তার প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করা। পাশাপাশি বিজয়ের জন্য নিজেদের যোগ্যতার বৃদ্ধি ও তার পক্ষ থেকে সাহায্য চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত।

৩. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা:- বিজয়ের মুহূর্তে আনন্দে আত্মহারা না হয়ে এই সূরায় আল্লাহর প্রশংসা এবং নিজেদের অপূর্ণতা ও ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে। কোন অত্যাচার বা শাস্তির মুখে পরাজিতরা কখনো পরিবর্তিত হয় না। সুতরাং, তাদের প্রতিও ক্ষমা ও দয়ার প্রদর্শনের এক সূক্ষ্ম ইঙ্গিত এই সূরায় প্রদান করা হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, আল্লাহ যখন আপনাকে আপনার শত্রুর উপর বিজয় দান করবেন। এবং আপনার শত্রুদের অপমানের জবাবে আপনাকে সম্মানিত করবেন। তখন সকল প্রকার গর্ব প্রকাশ থেকে বিরত থেকে একমাত্র আল্লাহর শোকর ও প্রশংসা করুন। পাশাপাশি নিজের ত্রুটি ও অপূর্ণতার জন্য তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। সকল বড়ত্ব ও গৌরবের একমাত্র অধিকারী তিনিই।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 bbcekottor.com
Technical suported by Mohammad Iliych